প্রায় সকল কম্পিউটার ব্যবহারকারীগণই ফন্ট শব্দটির সাথে পরিচিত। একটি কম্পিউটারে ফিজিক্যাল কিবোর্ড যুক্ত থাকলেও এতে যদি বাংলা ফন্ট এবং বাংলা কিবোর্ড (সফ্টওয়্যার) না থাকে তবে আপনি বাংলা টাইপ করতে পারবেন না। ফন্ট কি (Font) সম্পর্কে এই পর্বে আমরা বিস্তারিত জানতে চেষ্টা করবো।
Table of Contents
ফন্ট কি?
আমাদের হাতের লেখা আর কোন মুদ্রিত বইয়ের লেখা কি এক? কখনই না! কারণ আমাদের হাতের লেখার অক্ষরগুলো কম-বেশী ছোট-বড় হয়ে থাকে। কিন্তু বই-পত্রে তা হয় না। সাধারণত আমরা বিভিন্ন বই-পত্র বা পত্রিকা পড়ে থাকি। এ সকল বই পত্রে যে লেখনির চিত্র তথা বর্ণগুলি অত্যন্ত সুশৃঙ্খল এবং সুন্দর করে সাজানো থাকে। এই সাজানো বর্ণগুলির সমষ্টিকে অর্থাৎ অ হতে চন্দ্রবিন্দু পর্যন্ত, দাড়ি, কমা, সেমিকোলন ইত্যাদির সমষ্টিকে কম্পিউটারের ভাষায় ফন্ট বলে।
কম্পিউটারের এ ফন্টগুলিকে ইচ্ছেমত ছোট বা বড় করা যায়। অক্ষরগুলোকে কিছুটা বাকানো করা যায় (italic), অক্ষরের মাঝখানে রেখা দেয়া যায় বা নিচের দিকে রেখা তথা Underline দেয়া যায়।পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন ধরনের ফন্ট রয়েছে। একই ভাষায় আবার বিভিন্ন স্টাইলের অসংখ্য ফন্ট থাকতে পারে। যেমন বাংলা ভাষায় কয়েকটি bangla font এর নাম হচ্ছে “SutonnyMJ” “KarnaphuliMJ” “Bangla” ইত্যাদি। এ ফন্টগুলোর একেকটা একেক ধরণের।
নিম্নের চিত্রে একটি নমুনা দেখানো হলো।
ASCII কি?
অ্যাস্কি বা ASCII এর পূর্ণরূপ হচ্ছে American Standard Code for Information Interchange যা কম্পিউটার ও এ ধরণের বিভিন্ন টেলিযোগাযোগের যন্ত্রাংশসহ অন্যান্য যে সকল যন্ত্রে বর্ণভিত্তিক (Text Based) ইন্টারফেস দরকার হয় সেগুলোতে ব্যবহারের জন্য ইংরেজি ভাষার উপর ভিত্তি করে তৈরী করা এক ধরণের ক্যারেক্টার এনকোডিং হচ্ছে এই ASCII
ANSI ফন্ট কি?
ANSI এর পুরো ইংরেজি অর্থ হচ্ছে American National Standards Institute এই কোডবেসটি প্রধানত ASCII কোডের কোডবেসের কিছু কিছু সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করার লক্ষ্যে ব্যবহৃত হয়। ASCII কোডে ১২৮ টি কোডবেস ও ৭ বিট এবং ANSI কোডে ২৫৬ টি কোডবেস ও ৮ বিট– অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুন কোডবেসের সুবিধা যুক্ত হয়। কিন্তু ANSI ততোটা প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারেনি এবং এটি তেমন একটি জনপ্রিয়তাও পায়নি। পরবর্তীতে প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে UNICODE এনকোডিং প্রচলিত হয়। তারপর থেকে ASCII বা ANSI এ দুটি এনকোডিংই ধীরে ধীরে পুরাতন হয়ে পড়ে।
ইউনিকোড ফন্ট (Unicode Font) কি?
ইউনিকোড (Unicode) একটি আন্তর্জাতিক অক্ষর, বর্ণ বা সংকেত নির্ধারণী সিস্টেম। পৃথিবীর সকল ভাষাকে একটি সার্বজনীন মানদন্ডের আওতায় নিয়ে আসতে এর উৎপত্তি হয়। ইউনিকোড বিশ্বের প্রতিটি ভাষার প্রতিটি বর্ণের জন্য একটি বিশেষ নম্বর প্রদান করে একটি সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসে। প্রায় সকল আধুনিক অপারেটিং সিস্টেমে সমর্থিত এনকোডিং সিস্টেম হচ্ছে ইউনিকোড (Unicode). Universal Encoding – এই শব্দ দুটির প্রথম অংশটুকু নিয়ে Unicode শব্দের উৎপত্তি।
কম্পিউটারের লেখা বা Text এর একটি সার্বজনীন ও কমন এনকোডিং সিস্টেম তৈরির লক্ষ্যে ইউনিকোড কনসর্টিয়াম (Unicode Consortium) নামক অলাভজনক একটি সংস্থা ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে এই ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামই ইউনিকোডের কোডবেস রক্ষণাবেক্ষণ ও নতুন ভাষার জন্য সম্প্রসারণ কার্যক্রম শুরু করা হয়।ইউনিকোড মূলত ASCII কোডের উপরে নির্ভর করে গড়ে তোলা একটি এনকোডিং সিস্টেম। ASCII তে ব্যবহৃত কোড ৭ বিটের। কিন্তু আধুনিক ইউনিকোডে ব্যবহৃত কোড ১৬ বিটের। ইউনিকোডের সবচাইতে বড় সুবিধা হচ্ছে পৃথিবীর সকল ভাষার জন্যেই এখানে ইউনিক কোড রয়েছে।
ইউনিকোডে প্রতিটি অক্ষরের জন্য আলাদা আলাদা কোডবেস রয়েছে। এর ফলে ইউনিকোড এনকোডিংয়ে লেখা কোন টেক্সট পৃথিবীর প্রায় সমস্ত ডিভাইসেই একই রকম দেখায়। কোন কোন অক্ষর ভেঙে যাওয়া, আংশিক বা কিছু কিছু টেক্সট পরিবর্তন হয়ে যাওয়া, Latin অক্ষর দেখানো, কিছু কিছু ক্যারেক্টার মুছে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা ইউনিকোডে প্রায় হয় না। সময়ে সময়ে ইউনিকোড কোড বেসকে আরও উন্নত এবং ত্রটিমুক্ত করা হচ্ছে।
ইউনিকোডে বাংলা লেখার সূচনা ১৯৯১ সালে হলেও তাতে কিছু ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। ধীরে ধীরে পরবর্তী সংস্করণে সেগুলিকে সংশোধন করা হয়। সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে ইউনিকোডের ১৫ তম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এতে সারা পৃথিবীর ১৬১ টি ভাষার লিপিমালার জন্য আলাদা আলাদ কোড করা হয়।
বিনামূল্যের বাংলা টাইপ করার জন্য সেরা অভ্র কিবোর্ড সেটআপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
Free Bangla Font Download করা?
বাংলা ASCII-ANSI বা ইউনিকোড ফন্ট ডাউনলোড করার জন্য অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে। সেখান থেকে আপনি বিনামূল্যে বিভিন্ন ধরণের Bangla stylish font free download করে নিতে পারবেন। সেখানে Bangla fonts style দেখে ইচ্ছেমত ডাউনলোড করার সুযোগ রয়েছে। Free Bangla Font Download করার জন্য আপনি নিম্নের যে কোন ওয়েবসাইট হতে সহজেই ডাউনলোড করে নিন।
https://www.omicronlab.com/bangla-fonts.html
কিভাবে ডাউনলোড করবেন?
আমরা এখানে লিপিঘর হতে কিভাবে একটি ফন্ট ডাউনলোড করতে হয় তা শিখব। এজন্য প্রথমে আমাদের লিপিঘর এর ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। আপনি যে কোন ওয়েব ব্রাউজারে lipighor.com লিখে এন্টার কি চাপুন। অথবা এখানে ক্লিক করুন। নিম্নের চিত্রের মত একটি ওয়েবসাইটে আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে।
সেখানে “ফ্রি ফন্ট” অপশন নির্বাচন করুন। এবারে আপনাকে নিম্নের চিত্রের মতো পেজ এ নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে অসংখ্য ফন্ট দেখতে পাবেন।
আপনার পছন্দের ফন্টটির নিচের দিকে “ডাউনলোড” অপশন নির্বাচন করুন।
এবারে আপনাকে অন্য একটি পেজ এ আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে। যেখানে এই ফন্টটির প্রস্তুতকারীর ছবিসহ অন্যান্য তথ্যাদি দেখতে পাবেন।
সেখানে নিচের দিকে ডাউনলোড বাটন দেখতে পাবেন। সেখানে ক্লিক করুন।
এবারে আপনাকে নিম্নের চিত্রের মতো একটি সতর্কবার্তা দেখানো হবে। সতর্ক বার্তাটি ভালোভাবে পড়ে দেখুন।
শর্তাবলীতে সম্মত থাকলে চিত্রে দেখানো স্থানে ক্লিক করে ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করলে একটি ZIP ফাইল ডাউনলোড হয়ে যাবে।
কিভাবে Font Install করবেন?
আপনার ডাউনলোডকৃত জিপ ফাইলটির উপরে মাউসের সাহায্যে রাইট বাটনে ক্লিক করে সেখানে থাকা “Open” অপশন নির্বাচন করুন। নিম্নের চিত্রের মতো সেখানে এক বা একাধিক ফোল্ডার দেখতে পাবেন।
আপনি যদি আপনার পছন্দের ফন্ট এর ANSI ভার্সন ইন্সটল করতে চান তবে ANSI ফোল্ডার অথবা Unicode ফন্ট ইন্সটল করতে চাইলে Unicode ফোল্ডার এর উপর ডাবল ক্লিক করে তা ওপেন করে নিন। সেখানে আপনি আপনার কাঙ্খিত এক বা একাধিক ফন্ট স্টাইল পেয়ে যাবেন। যেমন Italic, Regular, Bold ইত্যাদি। আপনার কাঙ্খিত ফন্ট এর উপর মাউসের সাহায্যে ডাবল ক্লিক করলে নিম্নের চিত্রের মতো একটি ইন্টারফেস দেখতে পাবেন।
সেখানে চিহ্নিত “Install” অপশনে ক্লিক করলেই ফন্ট-টি ইনস্টল হয়ে যাবে।
পরিশেষে আশা করছি আপনি Bangla Font সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। সেই সাথে বিনামূল্যে কিভাবে স্টাইলিশ বাংলা ফন্ট ডাউনলোড ও সেটআপ করবেন তাও জানতে পেরেছেন।
এ বিষয়ে কোন মন্তব্য থাকলে নিম্নে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন।

