জন্ম নিবন্ধন কি এবং কেন? এ বিষয়ে আমরা ইতি পূর্বে জেনেছি। আপনি তা না দেখে থাকলে এখানে ক্লিক করে দেখে নিতে পারেন। এখানে আমরা জন্ম নিবন্ধনের ম্যাপিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেষ্টা করবো।
কিভাবে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করবেন জানতে এখানে ক্লিক করুন।
Table of Contents
জন্ম নিবন্ধন ম্যাপিং কি?
বাংলাদেশ সরকারের জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ায়া ম্যাপিং পদ্ধতিটি খুবই শক্তিশালী একটি বৈশিষ্ট। এটি সন্তানের সাথে তার পিতা ও মাতার একটি যোগসুত্র।
জন্ম নিবন্ধন ম্যাপিং হচ্ছে সন্তানের জন্ম নিবন্ধন সনদে পিতা ও মাতার জন্ম নিবন্ধন সনদের তথ্য সংযুক্ত থাকা। সন্তানের জন্ম নিবন্ধনে পিতা ও মাতার তথ্যের সেতুবন্ধন বা সূত্র সংযুক্ত করা। কোনো পিতা এবং মাতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর দিয়ে তাদের সন্তানের জন্ম নিবন্ধনে যোগসুত্র স্থাপন করাই হচ্ছে ম্যাপিং।
কোন কোন ক্ষেত্রে ম্যাপিং করতে হয়?
জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি বেশ কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করে বর্তমানের এ ধাপে এসে পৌছেছে। প্রথম অবস্থায় জন্মনিবন্ধন সনদ পেতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটিকর্পোরেশন বা ক্যান্টনমেন্ট দপ্তরে রক্ষিত রেজিস্টারে হাতে লিখে অন্তর্ভূক্ত করার পর বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ছাপানো একটি শক্ত কাগজে হাতে লিখে জন্ম নিবন্ধন সনদ বিতরণ করা হতো।
পরবর্তীতে এ সকল রেজিস্টারে থাকা জন্ম নিবন্ধন তথ্য ২০০৭ সালে অনলাইনে অন্তর্ভূক্ত করার প্রক্রিয়া চালু হয়। ২০২১ সালে এ জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় নতুন করে সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করার সময় পিতা ও মাতার সতের সংখ্যার জন্ম নিবন্ধন নম্বর অন্তর্ভূক্ত করার নিয়ম চালু করা হয়। কিন্তু এর আগে অনলাইনে অন্তর্ভূক্ত ব্যক্তিদের জন্ম নিবন্ধন তথ্যে তাদের পিতা ও মাতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর সংযুক্ত করার জন্য ম্যাপিং প্রয়োজন। অর্থাৎ যে সকল জন্ম নিবন্ধন সনদে পিতা ও মাতার জন্ম নিবন্ধনের নম্বর সংযুক্ত নেই তাদের ক্ষেত্রে ম্যাপিং প্রক্রিয়া প্রয়োজন।
জন্ম নিবন্ধন ম্যাপিং করতে কি কি তথ্য প্রয়োজন?
ম্যাপিং করতে তিন ধরণের জন্ম নিবন্ধন সনদের কপি প্রয়োজন। যে সন্তানের জন্মনিবন্ধন সনদে পিতা ও মাতার জন্ম নিবন্ধন তথ্য হাল-নাগাদ তথা ম্যাপিং করবেন সেই সনদের ডিজিটাল কপি এবং এর সাথে পিতা ও মাতার ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদ এর কপি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটিকর্পোরেশন এর জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দপ্তরে যোগাযোগ করলে তারা কিছুটা সময় নিয়ে কোন রকম ফি প্রদান ছাড়াই (এ সময়ের জন্য প্রযোজ্য) তা করে দেবেন। মনে রাখবেন ম্যাপিং করতে কোন ফি প্রয়োজন নেই। তবে ম্যাপিং করার পর জন্ম নিবন্ধনের আপডেট কপি পেতে আপনাকে ফি প্রদান করতে হবে।
কেন ম্যাপিং গুরুত্বপূর্ণ?
সন্তানের জন্ম নিবন্ধনে পিতা ও মাতার পরিপূর্ণ তথ্য অন্তর্ভূক্ত থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। এতে করে সন্তানের জন্ম নিবন্ধন তথ্যে পিতা ও মাতার সংশ্লিষ্টতা অধিকতর নিশ্চিত করা সম্ভব। এতে বংশানুক্রমের সংশ্লিষ্টতা সংযুক্ত থাকার ফলে উত্তরাধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব। দেশে জাতীয় পর্যায়ে জনসংখ্যা বিষয়ক বিশুদ্ধ তথ্যভান্ডার তৈরী করতে জন্ম নিবন্ধনে পিতা ও মাতার জন্মের তথ্য অন্তর্ভূক্ত করা তথা ম্যাপিং অত্যন্ত জরুরী।
ম্যাপিং পদ্ধতি চলমান থাকলে অনলাইনে প্রতিটি পরিবারের পারিবারিক তথ্যকাঠামো তৈরী হবে। যা জাতীয় পর্যায়ে দেশের নির্দিষ্ট বয়সের জনসংখ্যার পরিমান সহজেই নিশ্চত করা সম্ভব হবে। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনে শুদ্ধ ডাটাবেজের জন্য পারিবারিক তথ্যকাঠামো তথা ফ্যামিলি ট্রি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি প্রক্রিয়া।
দেশের উন্নয়নে এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। ম্যাপিং প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে পারলে ধীরে ধীরে ফ্যামিলি ট্রি গঠিত হবে এবং এতে করে সন্তানের উত্তরাধিকার নিশ্চিত করা যেতে পারে। সেই সাথে দেশের নাগরিকের প্রকৃত সংখ্যা, তাদের সকলের জন্মস্থান ইত্যাদি নানাবিধ তথ্য-উপাত্ত দ্বারা একটি স্বচ্ছ ও সুন্দর তথ্যভান্ডার তৈরী করা সম্ভব হবে।
ম্যাপিং করার সুবিধা কি?
মনে করুন আপনার সন্তান সংখ্যা ৫ জন। প্রতিটি সন্তানের জন্ম নিবন্ধন সনদও আলাদা আলাদা। কোন কারণে ভুল করে আপনার একেক সন্তানের জন্ম নিবন্ধন সনদে একক ধরণের পিতা বা মাতার নাম অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি সন্তানের জন্ম নিবন্ধন সনদে আলাদা আলাদাভাবে পিতা বা মাতার নাম সংশোধন করা বেশ ঝামেলাযুক্ত।
এ অবস্থায় যদি পিতা বা মাতার নাম একবার সংশোধন করে নেয়া হয় এবং এর পর যদি সেই সংশোধিত জন্ম নিবন্ধন কপি তথা জন্ম নিবন্ধন নম্বর দিয়ে তাদের সন্তানদের জন্ম নিবন্ধন সনদের ম্যাপিং করা হয় তবে সকল সন্তানের জন্ম নিবন্ধন সনদে এক সাথেই সংশোধন হয়ে যাবে। বিষয়টি বিস্তারিতভাবে বুঝতে নিম্নের উদাহরণটি লক্ষ্য করুন-
সন্তানের নাম | পিতার নাম | মাতার নাম | সন্তানের ক্রম |
মোছাঃ ফাতিমা খাতুন | হযরত মিয়া | রহিমা বিবি | ১ম |
মোঃ আজিজুল হক | মোঃ হযরত মিয়া | মোছাঃ রহিমা | ২য় |
মোছাঃ লিলি খাতুন | হযরত | রহিমা | ৩য় |
মোঃ রবিউল আলম | মোঃ হযরত আলী | মোছাঃ রহিমা বেগম | ৪র্থ |
মনে করুন উপরোক্ত টেবিলে চারজন সন্তানের প্রতিটি জন্ম নিবন্ধন সনদে পিতা ও মাতার নাম আলাদা আলাদা রয়েছে। যা সন্তানদের জন্ম নিবন্ধন সনদে বেশ গড়মিল। এক্ষেত্রে যদি শুধুমাত্র পিতা ও মাতার জন্ম নিবন্ধন সংশোধন পূর্বক “মোঃ হযরত আলী“ এবং “মোছাঃ রহিমা বেগম“ করে নেয়া হয় তবে সকল সন্তানের জন্ম নিবন্ধন তথ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিম্নোক্ত তথ্য প্রদর্শিত হবে।
সন্তানের নাম | পিতার নাম | মাতার নাম | সন্তানের ক্রম |
মোছাঃ ফাতিমা খাতুন | মোঃ হযরত আলী | মোছাঃ রহিমা বেগম | ১ম |
মোঃ আজিজুল হক | মোঃ হযরত আলী | মোছাঃ রহিমা বেগম | ২য় |
মোছাঃ লিলি খাতুন | মোঃ হযরত আলী | মোছাঃ রহিমা বেগম | ৩য় |
মোঃ রবিউল আলম | মোঃ হযরত আলী | মোছাঃ রহিমা বেগম | ৪র্থ |
এতে করে পিতা ও মাতার সাথে সাথে তাদের সন্তানদের জন্ম নিবন্ধনেও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে নতুন করে সন্তানের নিবন্ধন করার প্রবণতা বন্ধ হবে। জন্ম নিবন্ধনে পিতা ও মাতার জন্ম নিবন্ধন ম্যাপিং প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা হলে উক্ত সন্তান পিতা ও মাতার প্রকৃত সন্তান তথা ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারী হিসেবে স্থায়ীভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
ভিডিও আকারে দেখতে-