ভয়েস টাইপিং তথা মুখে উচ্চারণ করে সহজেই টাইপ করার জন্য আপনাকে অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনিশন তথা OCR অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করতে হবে। এর সাহায্যে কোনো ছবি বা ইমেজ অথবা হাতের লেখাকে টেক্সট-এ রূপান্তর করতে পারবেন।
Table of Contents
OCR অ্যাপ্লিকেশন কোনো ইমেজ বা স্ক্যান করা ডকুমেন্টের অক্ষরগুলিকে চিনতে পারে এবং তাদের একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাটে রূপান্তর করতে পারে যা পরবর্তীতে যে কোনো ওয়ার্ড প্রসেসর বা টেক্সট এডিটর অ্যাপ্লিকেশন তথা এমএস ওয়ার্ডে সম্পাদনা করে নিতে পারবেন।
তবে এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে OCR প্রযুক্তি শতভাগ নিখুঁত নয় এবং কিছু অক্ষর বা শব্দ শনাক্ত করার সময় ভুল হতে পারে। বিশেষ করে যদি ছবির গুণমান খারাপ হয় বা হাতের লেখা পড়তে অসুবিধা হয়। নির্ভুলতা নিশ্চিত করার জন্য রূপান্তরিত টেক্সটগুলিকে আপনাকে দেখে নিতে হবে।
OCR কি?
ওসিআর (OCR) মানে অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনিশন। এ প্রযুক্তিতে কম্পিউটারে একটি চিত্র বা স্ক্যান করা ডকুমেন্টের মধ্যে মুদ্রিত বা হাতের লেখা অক্ষরসমূহ শনাক্ত করতে সক্ষমতা প্রদান করে এবং সেগুলিকে মেশিন-পাঠযোগ্য টেক্সট-এ রূপান্তরিত করে। যা ডিজিটালভাবে সম্পাদনা তথা সংশোধন, সংযোজন, অনুসন্ধান এবং বিশ্লেষণ করা যায়।
OCR সাধারণত ডকুমেন্ট স্ক্যানিং এবং ডিজিটাইজেশনে ব্যবহৃত হয়। যেখানে হার্ড কপির নথিগুলিকে সহজই স্টোরেজ করতে, পুনরুদ্ধার এবং শেয়ার করার জন্য ইলেকট্রনিক ফরম্যাটে রূপান্তর করা হয়ে থাকে। ওসিআর অ্যাপ্লিকেশন একটি চিত্র বা নথিতে অক্ষরের আকার, প্যাটার্ন এবং টেক্সচার বিশ্লেষণ করার কাজে জটিল অ্যালগরিদম ব্যবহার করে এবং সেগুলিকে একটি কাঙ্খিত ফরম্যাটে রূপান্তর করে যা সহজেই সম্পাদনাযোগ্য টেক্সট এ পরিনত হয়।
ওসিআর প্রযুক্তির অসংখ্য অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে। যার দ্বারা কোন হার্ড কপির বইকে ডিজিটাইজ করা, ডেটা এন্ট্রি স্বয়ংক্রিয় করা, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য টেক্সট থেকে ভয়েস এ রূপান্তর সক্ষম করতে সহায়তা করা কাজগুলি করা হয়ে থাকে
ভয়েস টাইপিং কি?
ভয়েস টাইপিং, যা speech-to-text বা Dictation নামেও পরিচিত। এটি এমন একটি প্রযুক্তি যা ব্যবহারকারীকে কীবোর্ড এর পরিবর্তে মাইক্রোফোনের মাধ্যমে ভয়েস ব্যবহার করে একটি কম্পিউটার বা মোবাইল ডিভাইসে টেক্সট ইনপুট করার সুবিধা দিয়ে থাকে। মুখে উচ্চারিত শব্দগুলিকে ডিজিটাল টেক্সট-এ রূপান্তর করতে Speech Recognition অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে ভয়েস টাইপিং কাজ করা হয়।
Voice Type ব্যবহার করতে, একজন ব্যবহারকারীকে কেবল তার ডিভাইসে এ সুবিধাটি সক্রিয় করে নিয়ে কথা বলা শুরু করতে হবে। ব্যবহারকারী যখন কথা বলে তখন তার মুখে উচ্চারিত শব্দগুলি রিয়েল-টাইমে টেক্সট-এ প্রতিলিপি হিসেবে তৈরী হয়। এতে শারীরিকভাবে টাইপ করার প্রয়োজন ছাড়াই কোনো ডকুমেন্ট, মেসেজ বা ইমেইল পর্যন্ত তৈরী করা সম্ভব হয়ে থাকে।
ভয়েস টাইপিং একটি দরকারী টুল যা টাইপিং এর মতো কঠিন কাজকে মুহুর্তেই সহজ করে তোলে। যারা সময় ও শ্রম বাঁচাতে চান তাদের জন্য এটি অত্যন্ত পছন্দের। এই পদ্ধতি কিছু পেশায়ও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন সাংবাদিকতা বা আইনি প্রতিলিপি, পাঠ্য বইয়ের হার্ড কপিকে সফট কপিতে পরিণত করতে।
ভয়েস টাইপিং কেন আমাদের প্রয়োজন?
কম্পিউটারে বিভিন্ন কাজ করার সময় আমাদেরকে অনেক ধরণের টেক্সট টাইপ করতে হয়। আর এ সকল টাইপ সাধারণত আমরা এমএস ওয়ার্ডে করে থাকি। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, আমাদের কে কোনো ড্রাফট দেখে দেখে টাইপ করতে হয়। আবার অনেক সময় দেখা যায়, কম্পিউটার হতে প্রিন্ট করা কাগজ পুনরায় আমাদেরকে টাইপ করতে হয়।
হয়তো দেখা গেল যে, কোন প্রতিষ্ঠান থেকে পাঠানো কোন পিডিএফ ফাইল সংশোধন, সংযোজন বিয়োজন করে আবার সেটি টাইপ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে একবার টাইপ করা কাগজ আরও একবার টাইপ করা অত্যন্ত বিরক্তকর একটি কাজ। ভয়েস টাইপিং অথবা OCR এর সাহায্যে এ বিরক্তিকর কাজটি আপনি সহজেই করে ফেলতে পারেন।
এ পদ্ধতিতে কোন ড্রাফট বা কোনো পিডিএফ ফাইল হতে কোন টেক্সটসমূহ খুব সহজেই এডিটেবল টেক্সট আকারে এমএস ওয়ার্ডে নিতে পারবেন। এতে অনেক পরিশ্রম ও মুল্যবান সময় দুটোই বেঁচে যাবে। হোক সেটা ইংরেজিতে বা বাংলায়।
কিভাবে ভয়েস টাইপিং করবেন?
এজন্য আমাদের প্রয়োজন হবে একটি মাইক্রোফোন, একটি জিমেইল অ্যাকাউন্ট এবং ইন্টারনেট সংযোগ। অবশ্য আপনি আপনার স্মার্টফোন দিয়েও এ কাজ সেরে নিতে পারবেন। কিভাবে আপনার স্মার্টফোনকে মাইক্রোফোন হিসেবে ব্যবহার করবেন সে বিষয়ে জানতে এখানে ক্লিক করুন।
ধরে নিলাম আপনি আপনার কম্পিউটারে মাইক্রোফোন অ্যাক্টিভ করে নিয়েছেন। এবার প্রথমে আমরা গুগল ক্রম ব্রাউজার ওপেন করে নেব। মনে রাখবেন এ কাজে অবশ্যই গুগল ক্রম ব্রাউজারই ব্যবহার করতে হবে। এবারে ব্রাউজারের অ্যাড্রেস বারে টাইপ করুন mail.google.com এবং কিবোর্ড হতে এন্টার কি প্রেস করুন।
এবারে আপনার ই-মেইল অ্যাড্রেস এরপর পাসওয়ার্ড দিয়ে জিমেইল এ প্রবেশ করুন।
এবার গুগল এ্যাপস মেনুতে ক্লিক করে গুগল ডকস এর উপরে ক্লিক করুন।
আপনাকে একটি নতুন ট্যাব এ নিয়ে যাওয়া হবে। এবার একটি নতুন ডক ওপেন করার জন্য নিম্নের চিত্রে দেখানো আইকনে ক্লিক করুন।
অনেকটা মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের মতো একটি অ্যাপ্লিকেশন চালু হবে। এখানকার টুলস মেনুতে ক্লিক করে ভয়েস টাইপিং নামক অপশনে ক্লিক করুন।
নিম্নের চিত্রের মতো এ রকম একটি ইন্টারফেস আসবে।
ভয়েস টাইপিং ইংরেজিতে
ডিফল্ট হিসেবে ইংরেজি ভাষা এখানটায় সিলেক্ট করা রয়েছে। আপনি যদি ইংরেজি ভাষায় টাইপ করতে চান তবে কোন কিছু পরিবর্তন না করে শুধুমাত্র মাইক্রোফোন টির উপরে ক্লিক করে আপনার কম্পিউটারে যুক্ত মাইক্রোফোনের মাধ্যমে ইংরেজিতে আপনার ড্রাফট এর ট্রেক্সটগুলো মুখে উচ্চারণ করতে থাকুন।
দেখতে পাবেন খুবই সুন্দরভাবে মুখের উচ্চারণ দিয়ে টাইপ করা হচ্ছে। এভাবে আপনি খুবই অল্প সময়ে দ্রুত ইংরেজিতে টাইপ করার কাজ সেরে নিতে পারেবন।
ভয়েস টাইপিং বাংলায়
এভাবে আপনি ইচ্ছে করলেই বাংলাতেও টাইপ করতে পারবেন।
এ জন্য আপনি নিম্নের চিত্রে দেখানো ড্রপডাউন বাটনে ক্লিক করুন।
এবারে নিচের দিক হতে বাংলা, বাংলাদেশ সিলেক্ট করে নিন।
এরপর মাইক্রোফোন আইকনটিতে ক্লিক করে প্রয়োজনীয় বাংলা টেক্সট উচ্চারণ করতে থাকুন।
এভাবে প্রয়োজনীয় টাইপ করা হয়েগেলে টেক্সটগুলো কপি করে নিয়ে মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে পেস্ট করে অবশিষ্ট প্রয়োজনীয় সম্পাদনা করে নিন।
পরিশেষে, এ বিষয়ে আপনার মূল্যবান মতামত নিম্নে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন। ট্রিকসটি কাজের মনে হলে আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
ভিডিও আকারে দেখতে-