যে জমির দলিল বাতিল হয়ে যাবে

দেশে ছয় ধরণের দলিল বাতিল করা হচ্ছে

দেশে জমি-জমা সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে ছয় ধরণের দলিল বাতিল করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার বাংলাদেশে বিদ্যমান জমি-জমা সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে ছয় ধরণের দলিলে ভুল থাকার কারণে বা বিশেষ সমস্যার কারণে এ সকল দলিল পুরোপুরিভাবে নিষ্ক্রিয় বা বাতিল করে দেওয়ার সিন্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

দেশের জমি-জমা সংক্রান্ত তথ্যাদি ডিজিটাল করার লক্ষ্যে তৈরী করা সকল দলিল অনলাইনে অন্তর্ভূক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ফলে ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা অনেকটা নিরসন হবে। এ প্রক্রিয়া যাতে নির্ভূলভাবে সম্পন্ন হয় সে লক্ষ্যে এ ছয় ধরণের দলিল এড়িয়ে যাওয়ার জন্য এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

কোন কোন দলিলগুলি বাতিল করা হবে

জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধসমূহ সহজেই নিষ্পত্তির জন্য তথা ভূমি হস্তান্তর প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ করার জন্য দেশে ছয় ধরণের দলিল বাতিল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। তন্মধ্যে প্রাথমিক অবস্থায় নিম্নের ছয় ধরণের দলিলসমূহ বাতিলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

১. হেবা দলিল
২. ওসিয়তনামা দলিল
৩. জাল দলিল
৪. রেজিস্ট্রেশন বিহীন দলিল
৫. জোরপূর্বক বা ক্ষমতাবলে করে নেয়া দলিল
৬. প্রাপ্তির চাইতে অধিক বিক্রয় দলিল

নিম্নে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

যে ধরণের হেবা দলিল বাতিল করা হবে

হেবা দলিল যদিও একটি বৈধ দলিল তবুও দেখা যায় যে অনেক সময় হেবা করার ক্ষেত্রে অনেক ব্যক্তি রয়েছেন তারা হেবার যে নির্দিষ্ট শর্ত বা যে সকল নিয়ম-নীতি রয়েছে সেগুলো না মেনেই এ ধরণের দলিল সম্পাদন করে থাকেন।

অনেক সময় এমন ধরণের হেবা দলিল হয়ে থাকে যেমন কোন অসুস্থ বাবাকে দিয়ে বা অসুস্থ মাকে দিয়ে কোন একজন ছেলে বা কোন একজন মেয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তাকে দিয়ে জোরপূর্বক টিপসহি করিয়ে নিয়ে দলিল তৈরী করে থাকেন। অনেক সময় অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ করার খরচ চালানোর জন্য জমি বিক্রয় বা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে কোন সন্তান তার অন্য ভাই-বোন তথা ওয়ারিশদের বঞ্চিত করে সে নিজের নামেই হেবা করে নেয়। আবার অনেক ব্যক্তি আছেন তারা অসুস্থ বা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কোন পিতা-মাতা তাদের ভুল বুঝিয়ে কোন একজন ছেলে তার নিজের নামে ওই সম্পত্তি হেবা করে নেওয়ার সুযোগ নেয়। এই ধরণের জালিয়াতির মাধ্যমে করা হেবা দলিল বাতিলসমূহ বাতিল বলে বিবেচিত হবে।

দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী জমির দলিল কত প্রকার এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

যে ধরণের ওসিয়তনামা দলিল বাতিল হবে

ওসিয়তনামা দলিল সাধারণত এক ধরণের শর্তযুক্ত দলিল। আমাদের দেশে বেশরীভাগ মানুষই ওসিয়তের শর্তসমূহ জানে না। যেমন ওসিয়তনামা দলিল করার ক্ষেত্রে প্রধান নিয়ম হচ্ছে এক তৃতীয়াংশের বেশি সম্পত্তি ওসিয়ত করা যায় না। ওসিয়তনামা দলিল করার ক্ষেত্রে এটা একটা শর্ত। আরও একটি শর্ত হচ্ছে যদি ওসিয়ত করতে হলে নিজ ওয়ারিশের বাহিরে ওসিয়ত করতে হবে। এর মানে হচ্ছে এমন কোনও একজন ব্যক্তি যাকে আমি ওসিয়ত করে সম্পত্তি দেব বলে মনস্থির করেছি উক্ত ব্যক্তিটিকে অবশ্যই ওয়ারিশের বাইরের হতে হবে।

অর্থাৎ কোন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পূর্বে তার ছেলে বা মেয়ে তাদের ভিতরে কাউকে ওসিয়তনামা দলিল করে দিয়ে থাকলে উক্ত দলিল বাতিল হয়ে যাবে। কোনও ব্যক্তি ওসিয়তনামা দলিল করতে চাইলে তার সমস্ত সম্পত্তির তিন ভাগে বিভক্ত করে উনি চাইলে সর্বোচ্চ এক ভাগ পর্যন্ত যে কাউকে ওসিয়তনামা দলিল করে দিতে পারবে। তবে উক্ত ব্যক্তি তার ওয়ারিশদের বাহিরের কেউ হতে হবে।

ওসিয়তনামা দলিলের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে যদি ইতিপূর্বে কারও নামে ওসিয়তনামা দলিল করা হয়ে থাকে এবং যে ব্যক্তি ওসিয়ত করছে তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় মৃত্যুর পূর্বে আবার আরেকজনকে ওসিয়ত করেন সেক্ষেত্রে ওসিয়ত নামার দলিল হিসেবে প্রথমটা কার্যকর হবে না অর্থাৎ ওই ব্যক্তি সর্বশেষ যাকে ওসিয়তনামা দলিল করে দিয়েছে সেই ওসিয়তনামা দলিলটি কার্যকর হবে।

জাল দলিল

অনেক ব্যক্তি রয়েছেন যারা অহরহ জাল দলিল তৈরি করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে এগুলো তৈরি করে জমি হস্তান্তর, বেচা-বিক্রি বা নিজেরা ভোগ দখলে আছেন। বর্তমানে এসব দলিল চিহ্নিত করা হচ্ছে। এগুলো সরকারের পক্ষ থেকে বাতিল করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

কেননা সরকারিভাবে যখন সকল দলিল অনলাইনকরণ করা হবে তখন জাল দলিল সমূহ সহজেই বাছাই করা সম্ভব হবে। এ প্রক্রিয়ায় জাল দলিলগুলো চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে যারা জমির মালিকানা লাভ করেছে তাদের তথা এই জাল দলিলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার মাধ্যমে জাল দলিল বাতিল হয়ে যাবে এবং উক্ত জমির প্রকৃত মালিক হিসেবে বা প্রকৃত মালিকদের ওয়ারিশ হিসেবে ওই জমির মালিকানা ফেরত পাবেন।

রেজিস্ট্রেশন বিহীন দলিল

রেজিস্ট্রেশন বিহীন সকল দলিল বাতিল হয়ে যাবে। রেজিস্ট্রেশন বিহীন দলিল বলতে সাধারণত অনেক ব্যক্তি আছেন যারা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার জন্য এবং সরকারকে দলিল রেজিস্ট্রেশন করার সময় যে নির্দিষ্ট পরিমান ফি প্রদান করে দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে হয় তা থেকে সরকারকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে মূলত অনেকে নিজেদের ভিতরে ঘরোয়াভাবে বা কোন একজন মহুরি ব্যবহার করে একই রকমের একটা দলিল তৈরি করে থাকেন। অর্থাৎ মহুরিকে ব্যবহার করে দলিল রেজিস্ট্রেশন করার পূর্বে যেভাবে দলিল লিখে নিতে হয় সেভাবে লেখা-লেখি করে নিয়ে থাকেন।

এই ধরনের কিছু রেজিস্ট্রি বিহীন দলিল অনুযায়ী অনেক ব্যক্তি আছে তারা জমির মালিকানা যুগের পর যুগ ধরে রেখেছেন। তারা এখন এই রেজিস্ট্রেশন বিহীন দলিল অনুযায়ী যদি জমির মালিকানা দাবি করে বা জমির মালিকানা ধরে রাখতে চেষ্টা করে তাহলে তারা কোনভাবেই ওই রেজিস্ট্রেশন বিহীন দলিল ব্যবহার করে জমির মালিকানা ধরে রাখতে পারবে না তথা এ ধরণের দলিল বাতিল হয়ে যাবে।

জোর পূর্বক মালিকানা লাভ করেছিল

ক্ষমতার অপব্যবহার করে যারা জমির মালিকানা লাভ করেছিল তথা রাজনৈতিকভাবে বা জোর পূর্বক ক্ষমতা প্রয়োগ করে বা পেশি শক্তির বলে জমির মালিকানা লাভ করেছিল এবং জমি স্থায়ীভাবে নিজেদের করে নিয়েছিল আর এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় যে তারা জোরপূর্বক কাউকে ব্যবহার করে টিপসহি নিয়ে জোরপূর্বক সেই জমি ভোগ দখল করে নিয়ে নিজের নামে রেকর্ড করে নিয়েছে এই ধরনের দলিল বাতিল করা হবে।

এমন অনেক ঘটনা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এভাবে যারা জমির মালিকানা লাভ করেছিল বা এভাবে যারা জোরপূর্বক ক্ষমতা ব্যবহার করার মাধ্যমে জমির মালিকানা লাভ করেছিল সেই সকল ভিক্টিম ব্যক্তি বা যাদেরকে বা তাদের মালিকানা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল তারা যদি মনে করে যে তাদের জমিদারের মালিকানা ফেরত পাওয়ার জন্য তারা আবেদন করে থাকলে উক্ত জোর পূর্বক করে নেয়া দলিল বাতিল করতে পারবেন।

প্রাপ্তির চাইতে অধিক বিক্রয় দলিল বাতিল

ওয়ারিশ হিসেবে প্রাপ্ত অংশের চেয়ে বেশি বিক্রয় করা জমির দলিল সরকার বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনেক সময় দেখা যায় যে, এক খতিয়ানে অনেক অংশীদার থাকে বা অনেক সময় কোনও ব্যক্তি মারা গেলে সেই জমির উপরে অনেক ওয়ারিশদের অংশ তৈরি হয়। এ সকল ওয়ারিশদের ক্ষেত্রে অনেকেই কিছু পরিমাণ জমি বিক্রয় করার নাম করে বেশি পরিমাণ জমি কারও নিকট বিক্রয় করে ফেলে।

এভাবে পাওনা অংশের চেয়ে বেশি বিক্রয় করা জমি দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী বৈধ ওয়ারিশগণ ফেরত নিতে পারবেন বা নিজের আওতায় করে নিতে পারবেন। কেননা যিনি পাওনার চাইতে বেশী বিক্রি করা জমিটি বিক্রয় করে দিয়েছেন এটা কোনভাবেই টিকবে না। যার যেখানে যতটুকু অংশ রয়েছে সেই ওয়ারিশ তার ততটুকু অংশ বের করে নিবেন বা অংশ বের করে নেওয়ার জন্য মামলা দায়ের করতে পারবেন।

এক্ষেত্রে উক্ত দলিলের বিক্রিত ব্যক্তির শুধুমাত্র ওয়ারিশ হিসেবে পাওনা অংশ টুকু টিকবে। এই ধরণের অধিক পরিমানে বিক্রয়কৃত দলিল সমূহ বাতিল হয়ে যাবে।

1 thought on “দেশে ছয় ধরণের দলিল বাতিল করা হচ্ছে”

  1. মোহাম্মদ আবাদ হোসাইন

    আমার মায়ের জমি নানা থেকে প্রাপ্ত,সেই জমি জোর করে একজন সেনা কর্মকর্তা এই পর্যন্ত বসত বিঠা দখল করে আছে, আমার কাছে কোন ডকুমেন্ট নাই।কি করনীয়,,,

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version