তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে অসংখ্য মানুষ অনলাইনে কাজ করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করছেন। কাজের সুবিধার জন্য এ সকল মানুষজন ল্যাপটপের প্রতি আগ্রহী হয়ে থাকেন। তবে মূল্য বিবেচনায় এবং অর্থ স্বল্পতার কারণে আমরা বেশীরভাগ সময়ে সেকেন্ড হ্যান্ড বা ব্যবহৃত ল্যাপটপ ক্রয়ে আগ্রহী হয়ে থাকি। কিন্তু পুরাতন ল্যাপটপ কেনার আগে আমাদের এর বেশ কিছু বিষয় খুটিয়ে দেখা প্রয়োজন। তা না হলে আমাদের আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা থেকেই যায়।
Table of Contents
কোন ব্র্যান্ডের কিনবেন
আপনি যে ব্র্যান্ডের ল্যাপটপই কিনতে চান না কেন আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, সেটা যেন বিজনেস সিরিজের হয়ে থাকে। কারণ এই সিরিজের ল্যাপটপগুলি সাধারণত লং লাস্টিং হয়ে থাকে। এই সকল ল্যাপটপ পাচ-দশ বছর অনায়াসে ব্যবহার করা যেতে পারে। বিজনেস সিরিজের ল্যাপটপ চেনার উপায় হচ্ছে HP এর ক্ষেত্রে EliteBook, Dell এর ক্ষেত্রে Latitude এবং Lenovo এর ক্ষেত্রে Thinkpad এই মডেলের ল্যাপটপগুলি সাধারণত বিজনেস সিরিজের হয়ে থাকে।

কোথা থেকে কিনবেন
অবশ্যই সেকেন্ড হ্যান্ড বা উইজড ল্যাপটপ কেনার ক্ষেত্রে বড় ধরণের ব্র্যান্ড শপ বা পরিচিত কোন ব্যক্তি অথবা পরিচিত দোকান হতে নিতে পারলে ভালো। আর যদি bikroy.com থেকে কিনতে চান তবে উক্ত ল্যাপটেপর প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস যেন অবশ্যই থাকে সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখবেন। শুধু ডকুমেন্টস থাকলেই হবে না সেগুলোর সাথে ল্যাপটপটির মিল রয়েছে কিনা তাও দেখে নিতে হবে।
পুরাতন ল্যাপটপ কেনার আগে যা দেখে নেয়া উচিত
এখানে আমরা পুরাতন ল্যাপটপ কেনার আগে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এমন কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করবো।
উৎপাদন তারিখ এবং উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান
পুরাতন ল্যাপটপ কেনার সময়ে অবশ্যই এর উৎপাদন তারিখ এবং এর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের তথ্য দেখে নেয়া উচিত। এতে করে ল্যাপটপটি কতটা সময় ধরে ব্যবহৃত হয়ে থাকতে পারে সে সম্পর্কে একটি ধারণা পেয়ে যাবেন।
ডেল, লেনোভো এবং এইচপি-এর মতো ল্যাপটপ নির্মাতারা প্রতিষ্ঠানগুলি হতে ল্যাপটপটির উৎপাদন তারিখ জানার জন্য এর পিছনদিকে সিরিয়াল নম্বর ব্যবহার করে থাকে। যা দেখে সহজেই উৎপাদন তারিখ ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত তথ্যাদি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবেন।
বাহ্যিক অবস্থা-
পুরাতন ল্যাপটপ কেনার আগে প্রথমেই আপনাকে এর বাহ্যিক অবস্থা দেখে নিতে হবে। ল্যাপটপের বাহ্যিক অবস্থা উজ্জ্বল আলোতে বা ভাল আলোকিত অবস্থায় পরীক্ষা করে দেখুন। বিশেষ করে স্ক্রীনে কোন সুস্পষ্ট ভাঙ্গা বা কোন বড় স্ক্র্যাচ আছে কিনা তা পরীক্ষা করুন।
ল্যাপটপের কেসিংয়ে কোনো চিপ বা অন্য কোনো অংশে ক্ষতির কোন চিহ্ন আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন। সেই সাথে এর আলগা কব্জা, এর স্ক্রুগুলো ঠিকমতো আছে কিনা বা এর বাইরের কোন অংশ আলগা কিনা তা ভালোভাবে দেখে নিন।
নতুন স্মার্টফোন কেনার সময় যে বিষয়গুলো দেখা উচিত বিষয়ে জানতে এখানে ক্লিক করুন।
কিবোর্ড এর অবস্থা
কিবোর্ডের কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য এটিতে যে কোনও ওয়ার্ড প্রসেসিং সফটওয়্যার চালু করে নিয়ে এতে কিছুক্ষণ ধরে প্রতিটি অক্ষর কয়েকবার করে টাইপ করুন। ভালোভাবে লক্ষ্য করুন যে, কোন কি কিবোর্ডের ভিতরের মেকানিজম নিজেই আটকে যায় কিনা। অথবা আপনার টাইপ করা অক্ষরের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে কিনা। সেই সাথে টাইপ করার সময় নিশ্চিত করুন যে এর শিফট, ক্যাপস লক, কন্ট্রোল ফাংশনসহ সমস্ত কিগুলি ঠিকমত কাজ করছে কিনা।
ব্যাটারি ব্যাকআপ
পুরাতন ল্যাপটপ কেনার সময়ে এর ব্যাটারির অবস্থা পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরী। এর ব্যাটারি কতটা চার্জ সঞ্চয় করতে পারে এবং ব্যাটারি এর ফিজিক্যাল হেলথ সম্পর্কে জেনে নেয়া, ইত্যাদি বিষয়গুলির উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। ব্যাটারিটি কতক্ষণ ল্যাপটপটিকে চালু রাখতে পারবে সে সম্পর্কে ভাল রকমের ধারণা জেনে নেয়া উচিত। যাচাই করে নিন যে ব্যাটারি সঠিকভাবে চার্জ হয় এবং ধিরে ধিরে ডিসচার্জ হয় কিনা।
সংযোগ পোর্ট সমূহ
পুরাতন ল্যাপটপ কেনার সময়ে এতে থাকা বিভিন্ন পোর্টগুলি পরীক্ষা করে নিতে ভুলবেন না। এতে থাকা USB টাইপ পোর্ট, ইউএসবি Type-C পোর্ট, SD কার্ড রিডার এবং HDMI বা ভিজিএ স্লট রয়েছে কিনা দেখে নিন। শুধু পোর্টগুলি থাকলেই হবে না পারলে পোর্টগুলি আপনি নিজেই ব্যবহার করে একটু যাচাই করে নিন, সকল পোর্টগুলি সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা।
স্টোরেজ
স্টোরেজ বিষয়ে দেখে নিন এটিতে HDD নাকি SSD রয়েছে। যদি HDD হয়ে থাকে তবে তা হবে তুলনামূলক ধীর গতির। স্টোরেজ ক্যাপাসিটি দেখে নিন। সেই সাথে দেখে নিতে এতে কোন Bad Sector রয়েছে কিনা। CrystalDiskInfo নামক পোর্টেবল সফটওয়্যার দ্বারা আপনি সহজেই এর স্টোরেজ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্যাদি দেখে নিতে পারেন। একইভাবে ল্যাপটপটিতে যদি SSD ব্যবহার করা হয়ে থাকে সেটির অবস্থাও সহজেই দেখে নিতে পারেন।

CPU কনফিগারেশন
CPU একটি কম্পিউটারের মূল অংশ। পুরাতন ল্যাপটপ কেনার সময় অবশ্যই এ বিষয়টিতে বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন। এটি কোন জেনারেশনের, কত হার্টজ এর, কোন ব্র্যান্ডের ইত্যাদি। এ সকল তথ্যাদি এক নজরে দেখে নেয়ার জন্য ছোট একটি পোর্টেবল প্রোগ্রাম cpu-z ব্যবহার করতে পারেন। কোন রকম ইনস্টল এর ঝামেলা ছাড়াই অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করতে পারবেন। আপনি একটি পেনড্রাইভে অ্যাপ্লিকেশনটি সাথে করে নিয়ে যেতে পারেন। এতে করে ল্যাপটপের পোর্টও দেখে নেয়া হলো আবার CPU কনফিগরেশনও দেখে নেয়া হলো।

GPU কনফিগারেশন
পুরাতন ল্যাপটপ কেনার সময় এর GPU (graphics processing unit) সম্পর্কে অবশ্যই জেনে নেয়া দরকার। ল্যাপটপ দিয়ে আপনার প্রয়োজনীয় কার্যাদি সম্পাদনা করার সময়ে এর গুরুত্ব রয়েছে। ল্যাপটপে চালু করা কোন ইমেজ বা ছবি, ভিডিও অথবা কোন অ্যানিমেশন সঠিকভাবে রেন্ডার করার জন্য প্রয়োজনীয় পারফরমেন্স যেন GPUটিতে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। বিশেষ করে আপনি যদি এই ল্যাপটপ দিয়ে উচ্চ-রেজুলেশনের ভিডিও গেম খেলতে চান। GPU সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে এখানে ক্লিক করে ছোট আকারের পোর্টেবল সফটওয়্যার ডাউনলোড করে নিয়ে সেটি উক্ত ল্যাপটপে চালু করে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্যাদি জেনে নিতে পারেন।
পরিশেষে এ সকল বিষয়াদি বিশেষভাবে খেয়াল রেখে আপনার ব্যক্তিগত বুদ্ধিমত্তা দিয়ে যাচাই করে আপনি একটি পুরাতন বা সেকেন্ড হ্যান্ড ল্যাপটপ ক্রয় করতে পারেন।