নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা

কলা খাওয়ার উপকারিতা: আপনার শরীরে যে পরিবর্তন ঘটাবে

মানব শরীরের জন্য কলা খাওয়ার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। কলা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি খাওয়া ফলগুলির মধ্যে অন্যতম। প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণে ভরপুর এ ফলটির রয়েছে অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা। এ কারণে আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কলা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

দৈনিক কলা খাওয়ার উপকারিতা

আপনি যেকোনোভাবেই এই ফলটি খেতে পারেন যেমন পাউরুটির সাথে বা কোনো কিছুর সাথে ব্লেন্ডার করে, হোক সকালে কিংবা বিকেলে। কলা শারীরিক সুস্থ্যতা ধরে রাখার জন্য একটি দারুন এবং সুস্বাদু ফল হিসেবে বেশ সমাদৃত। এ পর্বে আমরা দৈনিক কলা খাওয়ার উপকারিতা এবং কেন এই ফলটিকে আপনার খাদ্য তালিকায় থাকা উচিত তা জানতে চেষ্টা করবো।

দৈনিক কলা খাওয়ার উপকারিতা
পাকা কলা (ছবিগুলি pngwing.com থেকে নেয়া)

শক্তির মাত্রা

আমরা জানি কলা হচ্ছে কার্বোহাইড্রেটের একটি ভালোমানের প্রাকৃতিক উৎস। কলাতে প্রাথমিকভাবে কার্বোহাইড্রেট গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ এবং সুক্রোজ আকারে থাকে। এই শর্করা উপদানগুলি দ্রুত এবং দীর্ঘসময়ের জন্য শরীরে শক্তি যোগায়। এ জন্য কলাকে ওয়ার্কআউটের আগে বা পরে একটি আদর্শ নাস্তা হিসেবে দেয়া হয়ে থাকে। কলাতে B6 এর মতো প্রয়োজনীয় ভিটামিন থাকায় এটি খাবারকে সহজেই শক্তিতে রূপান্তর করতে সাহায্য করে। ফলে দেহে শক্তি বৃদ্ধি পায়।

হজমশক্তি বৃদ্ধিতে

কলা ফলটি একটি ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য। যা পাকস্থলিতে থাকা খাদ্যকে স্বাস্থ্যকরভাবে হজমকে উৎসাহিত করে। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য কমে যায়। এতে থাকা ইনুলিনের মতো প্রিবায়োটিক ফাইবার যা অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার জন্য সহায়ক। এতে করে আমাদের অন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। একজন মানুষের নিয়মিত কলা খাওয়ার ফলে অন্ত্রে অ্যাসিড রিফ্লাক্স এবং পেট ফাঁপা সহ হজমজনিত বেশকিছু সমস্যা প্রশমিত করে থাকে।

হৃদরোগের ঝুকি কমায়

কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম। এই পটাশিয়াম মানবদেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি খনিজ। যা দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং সঠিকভাবে হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। পটাশিয়াম দেহে সোডিয়ামের প্রভাব প্রতিরোধ করে রক্তনালীগুলিকে শিথিল করতে এবং দেহে উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে

কলাতে থাকা Vitamin B6 নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদনে সহায়তা করে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে। এতে করে আমাদের মস্তিস্ক কম ক্লান্ত হয়। এতেকরে আমাদের মানসিক সমস্যা হবার সম্ভাবনা কমে যায়। এছাড়াও নিয়মিত কলা খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, মনোযোগ বৃদ্ধি এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নত হয়। একই সাথে মানবদেহে মস্তিস্কের চাপ এবং উদ্বেগের মাত্রা কমে যায়।

প্রতিদিন কলা খেলে কি হয়
ত্বকের যত্নে কলা

ত্বকের যত্নে

কলায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং Vitamin-C থাকে যা মানবদেহের ত্বককে Free Radicals এর কারণে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। কলায় থাকা জলীয় উপাদান ত্বকের হাইড্রেশন বজায় রাখতে সাহায্য করে। অন্যদিকে ভিটামিন বি৬ কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে। যা সুস্থ এবং তারুণ্যময় ত্বক ধরে রাখতে বিশেষ প্রয়োজন।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি

কলা খাওয়ার উপকারিতায় বলা যায় কলাতে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ নানা ধরণের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী পুষ্টি উপাদান। এই পুষ্টি উপাদানগুলি শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে থাকে। ফলে সংক্রামক রোগ-ব্যাধি, সর্দি-কাশি এবং অন্যান্য অসুস্থতার বিরুদ্ধে মানবদেহের লড়াই করা সহজ করে তোলে।

সকালে খালি পেটে পানি পানের যত উপকারিতা সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন।

ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করা

কলা ফল হিসেবে মিষ্টি হওয়া সত্ত্বেও কলায় ক্যালোরি কম এবং ফাইবার বেশি থাকে। যা ওজন দেহের নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আবার এতে থাকা ফাইবারের উপাদান আমাদের পেট ভরা অনুভূতির সৃষ্টি করে দীর্ঘসময় ধরে ক্ষুধা কমিয়ে রাখে। ফলে অন্যান্য ক্যালোরি গ্রহণ কমিয়ে দেহের ওজন কমাতে সাহায্য করে।

সুস্বাস্থ্যের জন্য একটি ভালো বালিশ কতটা গুরুত্বপূর্ণ জানতে এখানে ক্লিক করুন।

কিডনির কার্যকারিতায় ভূমিকা

কলায় থাকা পটাসিয়াম কেবল হৃদরোগের ঝুকিই কমায় না বরং কিডনির সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত কলা খাওয়ার ফলে দেহে ক্যালসিয়াম জমা কমে যায় এবং এতে করে কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি কমিয়ে কিডনিজনিত সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে।

কিভাবে কলা খাবেন
কলা খাবার অভ্যাস

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ

কলায় প্রাকৃতিক শর্করা থাকলেও এতে থাকা ফাইবারের পরিমাণ রক্তপ্রবাহে চিনির শোষণকে ধীর করতে সাহায্য করে। এত রক্তে শর্করার স্পাইক এবং ক্র্যাশ প্রতিরোধ ঘটে থাকে, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তিদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এ জন্য যারা পরিমিত পরিমানে খাদ্যাভাস্য-এ অভ্যস্ত তাদের জন্য কলাকে একটি উপযুক্ত খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

ব্যথা উপশমকারী

কলায় থাকা পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম দেহের পেশীর টান বা ব্যথা প্রতিরোধে সাহায্য করে। বিশেষ করে অনেক বেশী শারীরিক পরিশ্রমের পরে। এ জন্য ক্রীড়াবিদ এবং দৈনিক পরিশ্রমী ব্যক্তিরা দেহের শক্তি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করার জন্য এবং ব্যায়ামের পরে পেশী ক্লান্তি কমাতে কলা খেয়ে থাকেন।

কিভাবে কলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলবেন

দৈনিক কলা খাওয়ার উপকারিতা জানার পর যদি আপনি প্রতিদিন কলা খাওয়ার কথা ভাবছেন তাহলে কলা খাওয়ার জন্য নিম্নলিখিত খাদ্যাভাসগুলি গড়ে তুলতে পারেন।

বাদাম দই বা চিনাবাদাম ও মাখনের মতো প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের সাথে কলা মিশিয়ে নিলে বেশ সুষম একটি খাবার তৈরী হয়। যা খেতে বেশ সুস্বাদু।

দেহে পুষ্টি বৃদ্ধির জন্য ওটমিল এর সাথে কলা যোগ করে সহজেই তা নাস্তা হিসেবে চালিয়ে নিতে পারেন।

সকালে বা বিকেলে পাকা কলার সাথে পাউরুটি এবং সেদ্ধ ডিম যুক্ত করে খেতে পারেন।

সাবধানতা

কলা বেশ স্বাস্থ্যকর ফল হলেও এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া দেহে চিনির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারে। তাই দৈনিক এক থেকে দুটি কলা সাধারণত যথেষ্ট।

পরিশেষে দেহের স্বাস্থ্য উন্নত করার জন্য প্রতিদিন কলা খাওয়া বেশ সহজ একটি উপায়। দেহে শক্তি বৃদ্ধি এবং হজমে সহায়তা থেকে শুরু করে হৃদরোগের ঝুকি কমিয়ে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করার জন্য কলা প্রচুর উপকারিতা প্রদান করে। তাই সকল বয়সের মানুষের জন্য একটি চমৎকার ফলটি উপভোগ করুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top