মুসলিমদের নিকট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস হচ্ছে রমজান। রমজান মাসে আমাদের মনে বেশ কিছু প্রশ্ন জাগে। আমরা এখানে বেশ কিছু এই পবিত্র মাস রমজান বিষয়ক প্রশ্ন ও উত্তর জানতে চেষ্টা করব।
Table of Contents

রমজান বিষয়ক প্রশ্ন ও উত্তর
নিম্নে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের জন্য পবিত্র মাস রমজান বিষয়ক সম্ভাব্য কিছু প্রশ্ন ও উত্তর দেয়া হলো।
রোজার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কি এবং এর রোজার ফজিলত কি?
রমজানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পবিত্র কুরআনের সূরা আল বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ নিজেই বলেছেন ”হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন তোমাদের আগের লোকেদের প্রতি ফরয করা হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার।” রমজানের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে সিয়াম সাধনা করে তাকওয়া অর্জন করা। এ মাসে পানাহার সীমিত করে যাতে আমাদের মনের কুপ্রবৃত্তিকে নিজের বশে রাখতে পারি সেটাই মূল লক্ষ্য।
রমজানের সব থেকে বড় ফজিলত হচ্ছে এর প্রতিদান আল্লাহ তায়ালা নিজেই দেবেন। সিয়াম পালনকারীদের জন্য জান্নাতে আলাদা একটি ”রাইয়ান” নামক দরজা থাকবে। যা দিয়ে শুধুমাত্র সিয়াম পালনকারীরাই প্রবেশ করবেন।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানসহ পুণ্যের আশায় রমজানের রোজা পালন করে, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (বুখারি, হাদিস : ৩৮)
রোজা থাকা অবস্থায় ভুলে কিছু খেয়ে ফেললে রোজা কি ভেঙ্গে যাবে?
অনেক সময় রোজা থাকা অবস্থায় ভুলে কেউ কোন-কিছু খেয়ে ফেললে রোজা ভেঙ্গে যাবে না। যে ব্যক্তি ভুলে কোন কিছু খেয়ে ফেললে বা পান করে ফেললে সে যেন তার রোজা পূর্ণ করে নেয়।
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ভুলে আহার করল বা পান করল; সে যেন তার রোজা পূর্ণ করে। কারণ, আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১/২০২)
রমজানে কোন আমলগুলো বেশি বেশি করা উচিত?
রমজান মাসে আমাদের যেকোনো ভালো কাজ পরিমাণে বাড়িয়ে দেয়া উচিত। তবে এ মাসে আমাদের বিশেষ গুরুত্বের সাথে করা উচিত এমন কিছু কিছু আমল বা কাজ রয়েছে। যেমন- রোজা রাখা, যা একেবারে ফরজ। রমজানে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে সকল প্রকার পাপাচার থেকে বেঁচে থাকা। সকল প্রকার অপরাধ থেকে বেঁচে থাকা। কারণ সকল প্রকার পাপাচার হতে বেঁচে না থাকলে রোজা না হবারই সম্ভাবনা থাকে।
রমাদানের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো বেশী বেশী কুরআন তিলাওয়াত করা। কারণ আমরা জানি এই মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে এবং এই মাসে কুরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব অনেক অনেক বেশী।
রমজানে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আরও একটা আমল হচ্ছে তারাবির নামাজ। আমাদের চেষ্টা করা উচিত ধীরে-সুস্থে সুন্দরভাবে তারাবি বা কিয়ামুল লাইল আদায় করা।
এছাড়াও রমজান মাসে আমাদের সকল নেক আমলগুলো বেশি পরিমাণে করার পাশা-পাশি বেশি বেশি জিকির করা এবং আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা ও দান-সাদাকা করা।
রোজা থাকা অবস্থায় কি টুথপেস্ট দিয়ে ব্রাশ করা যাবে?
রমজান মাসে রোজা থাকা অবস্থায়, দিনের বেলায় টুথপেস্ট ব্যবহার করে ব্রাশ করা উচিত নয়। টুথপেস্ট ব্যবহার করলে আমাদের থুতুর সাথে এর কোনো অংশ পেটে যাবার সম্ভাবনা থেকে যায়। যেহেতু সিয়াম সাধনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে পানাহার বর্জন করা, তাই এমন কোন কিছু যা আমাদের পেটে যাবার সম্ভাবনা থাকে তা পরিহার করা কর্তব্য। টুথপেস্ট ব্যবহার করতে চাইলে সাহারি গ্রহণের সময় ফজরের আজান হওয়ার আগে ব্রাশ করা যেতে পারে।
রোজা থাকা অবস্থায় টুথপেস্ট না ব্যবহারে করে মেসওয়াক ব্যবহার করা উত্তম। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোজা রেখে মেসওয়াক করতেন।
সুন্দর সুন্দর ইসলামিক স্ট্যাটাস শেয়ার করতে এখানে ক্লিক করুন।
রোজা রেখে ইনসুলিন ও ইনহেলার নেয়া যাবে কি?
অনেকেই ডায়াবেটিসের রোগী আছেন যাদের সময়ে সময়ে ইনসুলিন নিতে হয়। বিশেষ করে খাবার গ্রহণের আগে। রমজান মাসে রোজা রেখে বা রমজানের বাইরেও যেকোনো সময় রোজা রেখে ইনসুলিন নিতে কোন অসুবিধা নেই। ইনজেকশন নিতেও কোন অসুবিধা নেই। কারণ হলো, ইনসুলিন বা ইনজেকশন এগুলো আমাদের পাকস্থলীতে যায় না। শরীরে ইনজেক্ট করা হলে যেহেতু তা মানব দেহে খাদ্যের কাজ করছে না বা পাকস্থলীতে যাচ্ছে না, তাই এতে রোজার অসুবিধা নেই।
ইনহেলারের বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে। কারও মতে ইনহেলারের মধ্যে যে মেডিসিন থাকে প্রথমত এটা রোগীর শ্বাসনালী সক্রিয় রাখার জন্য ব্যবহৃত হয় বা শ্বাসকষ্ট দূর করার জন্য। ফুসফুসের চিকিৎসায় এতে যে পরিমাণ মেডিসিন থাকে তা তুলনামূলক পরিমানে কম। তবে একান্ত কারোর খুব বড় কোন অসুবিধা না হয়ে থাকলে তিনি ইফতার পর্যন্ত অপেক্ষা করে তারপরে ইনহেলার গ্রহণ করা উচিত।
সাহরি এবং ইফতারের জন্য কোন দুয়া পড়তে হয়?
সাহরি বা ইফতারের জন্য বিশেষ কোন দুয়া নেই। তবে প্রচলিত কিছু দুয়া রয়েছে যার সঠিক ভিত্তি নেই। ইসলামে রাসুল সা: এর বর্ণিত নিয়ম-নীতির বাইয়ে যাবার সুযোগ নেই। রমজান মাসে হোক রমজানের বাইরে হোক রোজা রাখার জন্য ঘুম থেকে ওঠা, ভোর রাত্রে সাহরি খাওয়া এতেই রোজা রাখার নিয়ত হয়ে যায়।

বিসমিল্লাহ বলে ইফতার করা উচিত। এ ছাড়া নাওয়াইতুআন.. জাতীয় কোন নিয়ত মুখে উচ্চারণ করার কোন প্রয়োজন নেই। রাসুল সা: এর সুন্নাহ-তে কোথাও এ বিষয়ে কোন নির্দেশ পাওয়া যায় না।
সূর্যাস্তের সাথে ইফতার না করে কয়েক মিনিট দেরি করা হলে রোজার কোন ক্ষতি হবে কিনা?
সূর্যাস্তের সাথে সাথেই ইফতার করা উচিত। সাহল বিন সা‘দ আস-সাঈদী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “লোকেরা যতদিন দ্রুত ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে।”
এখানে এক-দু মিনিট এদিক সেদিক হয়ে গেলেও হাদিসের বরখেলাফ হবে না। তবে কেউ যদি কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়াই পাঁচ মিনিট-সাত মিনিট অথবা দশ মিনিট দেরী করেন তবে তা অবশ্যই অনুচিত কাজ। রোজা হয়ে যাবে কিন্তু অনুচিত কাজের ফলে এটি সুন্নাহর খেলাফ হবে। এ প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আমরা ইয়াহুদির মত করে ইফতারকে বিলম্ব করবো না। তাই সূর্য ডুবে যাবার সাথে সাথে আমরা ইফতার করবো।
ইফতারের পর সিগারেট খাওয়া যাবে কিনা?
সিগারেট খাওয়া বা ধূমপান করা সকল অবস্থায় একজন ঈমানদারের জন্য নিষিদ্ধ তথা হারাম। আমাদের এটা বর্জন করা উচিত। আল্লাহতালা বলেছেন ”তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না”। ধূমপান স্বাস্থ্যের ধ্বংস ডেকে আনে। একজন রুচিশীল ঈমানদার মানুষ তথা একজন স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ এই নাজায়েজ কাজটি করতে পারেন না।

পবিত্র রমজান মাস হচ্ছে বরকতময় মাস। এ মাসে আমাদের ভালো কাজ করতে বলা হয়েছে এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। সেখানে এই খারাপ কাজ করাটা নিন্দনীয় কাজ। আমরা ধূমপান পরিত্যাগ করার চেষ্টা করব।
রোজা অবস্থায় থুথু বা লালা গিলে ফেললে রোজা ভেঙে যাবে কিনা?
রোজা থাকা অবস্থায় থুথু বা লালা গিলে ফেললে রোজার কোন অসুবিধা হবে না। এটি প্রকৃতিগত বিষয়। যেহেতু থুতু কন্ঠনালীতে না গেলে আমরা বাঁচবো না বা বেঁচে থাকার প্রয়োজনে আমাদের কণ্ঠনালীকে শিক্ত রাখতে হয় সেই প্রয়োজনে লালা গিলাতে কোন অসুবিধা নেই।