জিমেইল অ্যাকাউন্ট নেই এমন স্মার্টফোন ব্যবহারকারী একজনও খুঁজে পাওয়া যাবে না। জিমেইল এতটাই জনপ্রিয়। কিভাবে একটি স্মার্ট জিমেইল আইডি বা পরিচ্ছন্ন জিমেইল অ্যাকাউন্ট তৈরি করবেন তা শিখতে চেষ্টা করবো।
Table of Contents
জিমেইল অ্যাকাউন্ট কতটা জনপ্রিয়
সারা বিশ্বে জিমেইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১.৮ বিলিয়ন এবং এর প্রায় ৭৫% ব্যবহারকারী জিমেইলকে তাদের এন্ড্রয়েড ডিভাইসে ব্যবহার করে থাকেন। ২০২২ সালের এক জরিপে দেখাগেছে যে, সে বছরে দিনে প্রায় ৩৩৩.৩ বিলিয়ন ইমেইল আদান-প্রদান করা হয়েছে জিমেইল দিয়ে। সহজেই বুঝতে পারছেন জিমেইল কতটা জনপ্রিয়।
সেপ্টেম্বর ২০১৪ এ, গুগল ঘোষণা করে যে ৫ মিলিয়ন জিমেইল লগইন পাসওয়ার্ড রাশিয়া ভিত্তিক একটি বিটকয়েন ফোরামে ফাঁস হয়েছে। যেগুলোর বেশিরভাগ পাসওয়ার্ড ছিল অনেক পুরাতন তথা দুর্বল।
একটি জিমেইল অ্যাকাউন্ট মানেই এতে একজন ব্যবহারকারীর অনেক তথ্যের উৎস। যা আমাদের সকলেরই জানা। তাই জিমেইল ব্যবহারে আমাদের যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে।
আজ আমরা এ পর্বে শিখতে চেষ্টা করবো সুরক্ষা নিশ্চিত করে কিভাবে একটি জিমেইল অ্যাকাউন্ট তৈরী করতে হয়।
স্মার্ট জিমেইল আইডি কি?
জিমেইল অ্যাকাউন্ট বা যেকোনো ধরণের ইমেইল আইডি তৈরী করার সময় যেমন-তেমন অ্যাকাউন্ট তৈরী করলেই হবে না। অবশ্যই আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, আপনার তৈরী করা জিমেইল অ্যাকাউন্ট হতে হবে পরিচ্ছন্ন। যা আপনার প্রতিনিধিত্ব করবে। আপনার নিজের নামের সাথে মানানসই বা ব্যবসায়িক নাম অথবা ব্রান্ড এর সাথে মানানসই, স্বল্প অক্ষর দিয়ে জিমেইল অ্যাকাউন্ট তৈরী করতে চেষ্টা করুন। আপনার জিমেইল অ্যাকাউন্টে জন্মসাল বা কোনও নম্বর ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন।
একটি স্মার্ট জিমেইল আইডি বা পরিচ্ছন্ন জিমেইল অ্যাড্রেস থাকা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি আপনার পেশাদারিত্ব, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং যোগাযোগে সহজতা নিশ্চিত করে। একটি সহজ এবং সহজেই চেনা যায় এমন ইমেল ঠিকানা (যেমন আপনার পুরো নাম বা ব্যবসায়িক নামসহ) অন্যদের জন্য আপনাকে শনাক্ত করা এবং আপনাকে তাদের মনে রাখা অনেক সহজ করে তোলে। যা বিশেষ করে পেশাদার বা ব্যবসায়িক বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্পষ্ট ইমেল অ্যাড্রেস আপনার ব্যক্তিত্বের বিশেষত্ব বিবরণের প্রতিফলন করে থাকে এবং এটি আপনার প্রতি অন্যান্যদের বিশ্বাস স্থাপন করে।
আবার একটি পরিচ্ছন্ন ইমেইল অ্যাড্রেস স্প্যাম বলে ভুয়া হওয়া বা বর্তমানের ব্যস্ত সময়ে কারও ইনবক্সে এমনভাবে দৃশ্যমান করে থাকে যা উপেক্ষা করার কারণ হয়ে থাকে। স্মার্ট জিমেইল আইডি বিভ্রান্তি দূর করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে প্রয়োজনীয় যোগাযোগে এর ভূমিকা রয়েছে। এটি আপনার চিঠিপত্র গুরুত্ব সহকারে নেওয়ায় ভূমিকা রাখে। আপনার পরিচিতিদের কাছে সহজেই একট স্মার্ট জিমেইল আইডি গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে তোলে।
ইমেইল পাঠানো, রিসিভ করা, রিপ্লাই দেয়া ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
জিমেইল অ্যাকাউন্ট তৈরী
পরিচ্ছন্ন জিমেইল অ্যাকাউন্ট তৈরী করতে আপনাকে কয়েকটি ধাপে তা করতে হবে। যা পর্যায়ক্রমে নিম্নে আলোচনা করা হলো-
ওয়েব সাইটে প্রবেশ
জিমেইল অ্যাকাউন্ট তৈরী করার জন্য আমরা প্রথমে আমাদের কম্পিউটার অথবা স্মার্টফোন হতে যেকোনও একটি ব্রাউজার ওপেন করে নেবো। ইতিপূর্বে কোনো জিমেইল এ লগ ইন করা থাকতে তা লগ আউট করে নেবো। এরপর এর অ্যাড্রেসবারে টাইপ করবো “mail.google.com” এবং কিবোর্ড হতে এন্টার কি প্রেস করবো বা স্মার্টফোনের “Go” প্রেস করবো। সব কিছু ঠিক থাকলে নিম্নের চিত্রের মতো একটি ইন্টারফেস প্রদর্শিত হবে।

নতুন জিমেইল আইডি তৈরীর অপশন
এখানে “Create account” এর উপর ক্লিক করবো। একটি ড্রপডাউন লিস্ট দেখাবে সেখানে “For my personal use” সিলেক্ট করবো। এবারে নিম্নের চিত্রের মতো একটি ইন্টারফেস আসবে। সেখানে “ভাষা” বাংলা থাকতে পারে। যদি বাংলা থাকে তবে তা ইংরেজিতে করে নেবার জন্য চিত্রে দেখানো নিচের দিকে ক্লিক করলে ভাষা নির্বাচন করার জন্য একটি লিস্ট বক্স আসবে সেখান হতে “English (United States)” সিলেক্ট করে নেব।

নাম এন্ট্রি করা
এবারে নিম্নের চিত্রের মতো ইন্টারফেস এ “First name” এবং “Last name” অর্থাৎ প্রথমে আপনার নামের প্রথম অংশ টাইপ করে দিন এবং দ্বিতীয় অংশে আপনার নামের বাকী অংশ টাইপ করে নিন। এরপর নিচের দিকে “Next” বাটনে ক্লিক করুন।

বেসিক তথ্য প্রদান
এবারে নিম্নের চিত্রের মতো একটি ইন্টারফেস আসবে সেখানে আপনি আপনার জন্ম তারিখ এবং নিচের দিকে লিঙ্গ নির্বাচন করে দিন। এবারে “Next” বাটনে ক্লিক করুন।

জিমেইল আইডি নির্বাচন
এবারে নিম্নের চিত্রের মতো আপনাকে আপনার জিমেইল আইডি বা অ্যাড্রেস নির্বাচন করার জন্য অপশন দেখাবে। সেখানে প্রথমের দিকে আপনার নামের সাথে মিল রেখে গুগল দুটি অ্যাকাউন্ট অ্যাড্রেস প্রদর্শন করবে। যা আপনার জিমেইল অ্যাকাউন্ট হিসেবে আপনি চাইলে নিতে পারেন। যা আপনার জিমেইল অ্যাকাউন্ট অর্থাৎ আপনার জিমেইল ঠিকানা জিমেইল আইিড হিসেবে বিবেচিত হবে। পরবর্তীতে এই জিমেইল আইডি আপনি আপনার প্রয়োজনীয় কোনও ব্যক্তিকে সরবরাহ করে ইমেইল আদান-প্রদান করতে পারবেন। এই জিমেইল আইডি হিসেবে আপনি যা নির্বাচন করবেন পুরো পৃথিবী জুড়ে তা আর দ্বিতীয়টি হবে না। অর্থাৎ এই ইমেইল এড্রেসটি শুধুমাত্র আপনারই।
কোনও কারণে যদি গুগলের দেয়া এই অ্যাকাউন্ট নেমগুলি আপনার পছন্দ না হয় তবে আপনি নিচের দিকে “Create your own Gmail address” অপশনে ক্লিক করুন। দেখতে পাবেন নিচের দিকে একটি টেক্সট বক্স প্রদর্শিত হবে। সেখানে আপনি আপনার পছন্দমতো জিমেইল আইডি নির্বাচন করে নিন।

মনে রাখবেন একটি জিমেইল অ্যাকাউন্ট অ্যাড্রেস তৈরী হবার পর আপনি আর কখনও তা পরিবর্তন করতে পারবেন না। তাই জিমেইল আইডি নির্বাচন করার সময় বেশ সতর্কতার সাথে তা নির্বাচন করুন।
জিমেইল আইডি বা জিমেইল অ্যাকাউন্ট নির্ধারণের সময় আপনাকে কয়েকটি বিষয় মনে রাখতে হবে। যেমন, আইডি যতটা সম্ভব ছোট নির্বাচন করুন। কারণ এই আইডিটি আপনি যখন অন্য কাউকে পাঠাবেন তখন এতে বেশ সুবিধা হবে। তাছাড়াও ছোট আইডি মনে রাখতে বা তা টাইপ করতে কম সময়ে হয়ে যাবে।
আপনার কাঙ্খিত জিমেইল আইডি যদি ব্যবহার উপযোগী হয়ে থাকে অর্থাৎ আপনার কাঙ্খিত অক্ষর বিশিস্ট জিমেইল অ্যাকাউন্ট যদি অন্য কেউ ইতিপূর্বে নিয়ে থাকে তবে নিম্নের চিত্রের মতো বার্তা দেখাবে।

এখানে আপনি কিছু অক্ষর সংযোজন বিয়োজন বা এদিক-সেদিক করে নিয়ে চেষ্টা করতে থাকুন। এভাবে একটি আইডি নির্বাচন করে নিয়ে “Next” বাটনে ক্লিক করুন।
পাসওয়ার্ড সেট করা
এবারে আপনার জিমেইল অ্যাকাউন্ট এর পাসওয়ার্ড সেট করার জন্য নিম্নের চিত্রের মতো পাসওয়ার্ড সেট করবার অপশন দেখাবে।

এখানে “Password” এর ঘরে আপনি পাসওয়ার্ড দিয়ে নিন।
আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে পাসওয়ার্ড কমপক্ষে ১০টি অক্ষর বিশিষ্ট হতে হবে এবং তা A-Z, a-z, 0-9, !@#$%^&*()_+ ইত্যাদি অক্ষরসমূহের সাথে মিশিয়ে দিন। সহজেই কেউ অনুমান করতে পারে এমন পাসওয়ার্ড কখনই ব্যবহার করা উচিত না। প্রয়োজনে পাসওয়ার্ড জেনারেটর এর সাহায্য নিতে পারেন।
প্রথম ঘরে পাসওয়ার্ড দেয়া হলে গেলে, নিচের দিকে “Confirm” এর ঘরে আবারও একই পাসওয়ার্ড দিয়ে নিন। এরপর “Next” বাটনে ক্লিক করুন।
হিউম্যান ভেরিফিকেশন
এবারে নিম্নের চিত্রের মতো একটি হিউম্যান ভেরিফিকেশন প্রসেস আপনাকে কমপ্লিট করতে হবে। এখানে আপনার মোবাইল ফোন নম্বরটি দিয়ে নিচের দিকে “Next” বাটনে ক্লিক করলে আপনার প্রদানকৃত মোবাইল নম্বরে একটি কোড পাঠানো হবে।

মোবাইল ফোনে প্রাপ্ত কোডটি বসিয়ে নিচের দিকে কনফার্ম বাটনে ক্লিক করুন।
রিকভারি ইমেইল
এবারে নিম্নের চিত্রের মতো একটি ইন্টারফেস আসবে। আপনার স্মার্ট জিমেইল আইডি এর নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সেখানে আপনাকে একটি ইমেইল অ্যাড্রেস প্রদান করতে হবে। যা ব্যবহার করে পরবর্তীতে আপনি যদি কখনও আপনার জিমেইল অ্যাকাউন্ট লক হয়ে যায় তা ফিরে পেতে পারেন। আপনি ইচ্ছে করলে আপনার অপর কোনও জিমেইল আইডি এখানে দিয়ে নিতে পারেন।

তাই অত্যন্ত বিশ্বস্ত ও সহজেই যোগাযোগ করতে পারবেন এমন কারও ইমেইল অ্যাড্রেস এখানে বসিয়ে দিয়ে “Next” বাটনে ক্লিক করুন। আপনি ইচ্ছে করলে এ অংশটুকু এড়িয়ে যেতে পারেন। কিন্তু তা না করাই ভালো। অর্থাৎ আপনি রিকোভারী ইমেইল অ্যাড্রেস এখান দিয়ে নিন।
এবারে নিম্নের চিত্রের মতো একটি ইন্টারফেস আসবে। সেখানে আপনি “ Yes, I\’m in” অথবা “Skip” যে কোনওটি নির্বাচন করে নিতে পারেন।

এবারে আপনাকে আবারও আপনার জিমেইল অ্যাকাউন্ট এর কিছু তথ্যাদি প্রদর্শন করা হবে। সেখানে “Next” বাটনে ক্লিক করুন।
জিমেইল ব্যবহারের শর্তাবলী
এবারে আপনাকে নিম্নের চিত্রের মতো “Privacy and Terms” সমূহ দেখানো হবে। আপনি সেগুলো পড়ে দেখে নিতে পারেন। সেখানে শেষের দিকে “I agree” বাটনে ক্লিক করুন।

ব্যাস আপনি আপনার জিমেইল অ্যাকাউন্ট/আইডি/অ্যাড্রেস খুলতে পেরেছেন। আপনাকে নিম্নের চিত্রের মতো জিমেইল এর মূল ইন্টারফেস এ নিয়ে যাওয়া হবে।

আশা করছি আপনি সফলভাবে জিমেইল আইডি খুলতে পেরেছেন।
যদি কোনও অংশ বুঝতে সমস্যা হয়ে থাকে তবে কমেন্টে আমাদের তা জানাতে পারেন।