লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারি নতুন যুগের ব্যাটারি

লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারি জগতে নতুন যুগান্তকারী আবিষ্কার

দীর্ঘ সময় চার্জ ধরে রাখতে ব্যাটারি প্রযুক্তির উন্নতি সাধনে লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারি এক নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারগুলি মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে লিথিয়াম-সালফার (Li-S) ব্যাটারি আবিষ্কার। অধিক মাত্রায় শক্তি সঞ্চয়, তুলনামূলক কম খরচ এবং উন্নত টেকসই এর প্রতিশ্রুতি নিয়ে এই ব্যাটারিগুলি বর্তমানে ইলেকট্রনিক্স খাত হতে বৈদ্যুতিক যানবাহনসহ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলিতে বিপ্লব ঘটাতে পারে।

লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারির সুবিধাসমূহ আধুনিক ইলেকট্রনিক্স শিল্পগুলিকে আরো আধুনিক হিসেবে রূপান্তর করতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। এখানে লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।

লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারি কী?

লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারি তৈরীতে ক্যাথোড হিসেবে সালফার এবং অ্যানোড হিসেবে লিথিয়াম ব্যবহার করা হবে। প্রচলিত ব্যাটারিগুলিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে কোবাল্ট। যা যথেষ্ট ব্যয়বহুল এবং বিশেষ কিছু ধাতুর উপর নির্ভরশীল। অপরদিকে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির বিপরীতে সালফার প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। যা সস্তা এবং পরিবেশগতভাবে বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ।

লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারি প্রযুক্তি

লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারির মূল সুবিধা

প্রচুর শক্তি সঞ্চয় করা: লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারি তাত্ত্বিকভাবে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির চাইতে পাঁচ গুণ পর্যন্ত বেশী শক্তি সঞ্চয় করে রাখতে পারে। যা বৈদ্যুতিক ডিভাইসগুলিকে আরও দীর্ঘ সময় ধরে চালানো যাবে। যা এই ব্যাটারির প্রথম এবং প্রধান সুবিধা।

কম খরচ: এ ধরণের ব্যাটারিতে ব্যবহৃত হবে সালফার। যা বেশ সহজলভ্য উপাদান। ফলে এ ধরণের ব্যাটারি তৈরীতে উৎপাদন খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমানে কম হবে।

স্থায়িত্ব: দুষ্প্রাপ্য এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক উপকরণের উপর নির্ভরতা কমিয়ে, Li-S ব্যাটারি একটি সবুজ শক্তি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। আবার দীর্ঘস্থায়ী শক্তি সঞ্চয়কারী হিসেবেও এটি বেশ ভালমানের।

স্যামসাং গ্যালাক্সি রিং প্রযুক্তির এই সেরা আবিষ্কার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারির ব্যবহার

আশা করা হচ্ছে Li-S ব্যাটারি বহুমুখী ব্যবহার করা সম্ভব হবে। খরচ সাশ্রয়ী হওয়ায় সবখানে এর ব্যবহার বাড়বে।

বৈদ্যুতিক যানবাহন (EVs): দীর্ঘস্থায়ী শক্তি EV-এর কার্যক্রম প্রসারিত করতে পারে এবং একই সাথে এগুলোর ওজন তুলনামূলক অনেক কম হবে। যা EV গ্রহণের ক্ষেত্রে বেশ বড় অসুবিধা দূর হবে।

মহাকাশ যানে: লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারি তুলনামূলক অনেক হালকা এবং শক্তিশালী হওয়ায় ব্যাটারিগুলি ড্রোন, উপগ্রহ এবং অন্যান্য মহাকাশে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির জন্য আদর্শ শক্তির আধার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। যেখানে ওজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গ্রিড স্টোরেজ: প্রচুর পরিমাণে শক্তি সঞ্চয় করার ক্ষমতা থাকায় এ ধরণের ব্যাটারিগুলিকে পুনঃ নবায়নযোগ্য শক্তি সঞ্চয়ের জন্য একটি কার্যকর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। যা সবুজ শক্তি তথা সৌর শক্তি এবং বায়ু শক্তির আরও ভালভাবে ধরে রাখতে সক্ষম করবে।

ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতির ব্যবহার: স্মার্টফোন, ল্যাপটপ এবং পরিধেয় প্রযুক্ত যেমন স্মার্টওয়াচ, হেডফোন এ সকল ডিভাইসগুলি দীর্ঘ ব্যাটারি লাইফ এবং দ্রুত চার্জিং সুবিধা পাওয়া যাাবে। ফলে এ সকল ইলেকট্রিক পণ্য দীর্ঘসময় ধরে ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে।

সামরিক এবং প্রতিরক্ষা: দূরবর্তী স্থানে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক সরঞ্জামগুলির জন্য বহনযোগ্য পাওয়ার হাউস হিসেবে Li-S ব্যাটারির শক্তি দ্বারা ব্যপক উন্নতি হবে।

লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারি
https://cen.acs.org/energy/energy-storage-/Lithium-sulfur-overtaking-lithium-ion/96/i41

লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারির ভবিষ্যৎ

  • লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারির সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ রয়েছে। নিম্ইনে সে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
  • খরচ সাশ্রয়ী উপাদান ব্যবহার এবং ব্যাটারির কর্মক্ষমতা উন্নত করার লক্ষ্যে ইতিপূর্বে ব্যবহৃত ক্যাথোড এবং অ্যানোডের পরিবর্তে নতুন যৌগিক উপকরণ ব্যবহার করে তৈরী।
  • বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং শিল্প নেতাদের মধ্যে সহযোগিতার ভিত্তিতে বাণিজ্যিকীকরণের প্রথ প্রশস্ত হওয়া।
  • মহাকাশ এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে তৈরীকৃত Li-S ব্যাটারি পরীক্ষা চলছে। যা বৃহৎ আকারে প্রয়োগের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
  • টেকসই এবং উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন পাওয়ার স্টোরেজ হিসেবে এর উৎপাদন বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যা Li-S প্রযুক্তির পরিবেশগত সুবিধা সমূহকে আরও উন্নত করবে।

লিথিয়াম-সালফার প্রযুক্তি বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ

লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারিগুলির নানাবিধ সুবিধা থাকার পরও এ প্রযুক্তি বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে।

লাইফ-সাইকেল সমস্যা: “shuttling effect” এর কারণে লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারিগুলির আয়ুষ্কাল কম হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেখানে polysulfides electrolyte-এ দ্রবীভূত হয় এবং সময়ের সাথে সাথে এটি ব্যাটারির অবনতি ঘটাতে পারে। এছাড়াও বারবার চার্জিং এবং ডিসচার্জিং চক্রের মধ্যে এ সমস্যাটি উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যাটারির কর্মক্ষমতা হ্রাস করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ব্যাটারির ক্ষমতা: লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির তুলনায় লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারি উচ্চ লেভেলের স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিসচার্জ হতে পারে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে একে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অসুবিধা হতে পারে।

নিরাপত্তা: লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির মতো Li-S প্রযুক্তির ব্যাটারি উৎপাদনে অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা এবং স্থিতিশীলতা সম্পর্কিত সৃষ্ট সমস্যাগুলি সমাধান করতে হবে।

বিশ্বব্যাপী গবেষকরা সক্রিয়ভাবে লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারি উৎপাদন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে তৈরী হওয়া সমস্যাগুলির সমাধান করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যেমন উন্নত ইলেক্ট্রোলাইট তৈরি করা, উন্নত ন্যানোম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করা। সেই সাথে ব্যাটারির স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি, কার্যকারিতা উন্নত করা এবং ব্যাটারির আয়ুষ্কাল বাড়ানো বেশ বড় আকারের চ্যালেঞ্জ।

”লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারি” ব্যাটারি প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। যদিও এ প্রযুক্তি এখনও ব্যাপক ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত নয়। তবুও এর অগ্রগতি ভবিষ্যতের দিকে, যেখানে অধিকতর শক্তি সঞ্চয় ব্যবস্থা, সাশ্রয়ী উপকরণ এবং আরও উন্নতমানের হবে বলে মনে করা হচ্ছে। পরিবহন, মহাকাশ এবং পুনঃ নবায়নযোগ্য শক্তির মতো শিল্পে বিপ্লব ঘটানোর জন্য লিথিয়াম-সালফার প্রযুক্তি অনেকটা এগিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top