জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন বিভিন্ন কারণে আমাদের জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। দেশের বৈধ নাগরিকত্ব প্রমাণে জাতীয় পরিচয় পত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিভিন্ন কারণে এতে থেকে যাওয়া কিছু কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে আমাদের মাঝে-মধ্যে ঝামেলা পোহাতে হয়। আজ আমরা শিখব কিভাবে অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করার আবেদন করবেন।
Table of Contents
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে কি কি ডকুমেন্ট প্রয়োজন
অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার জন্য যে সকল তথ্যাদির প্রয়োজন তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
নিজ নাম, পিতা ও মাতার নাম সংশোধনের ক্ষেত্রে-
- এসএসসি বা সমমান শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ
- জন্ম নিবন্ধন সনদ
- পিতা ও মাতার জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি
- পিতা ও মাতার নামের ক্ষেত্রে ভাই-বোনদের জন্মনিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয় পত্র বা স্কুল সার্টিফিকেট
- পিতা বা মাতা মৃত্যু বরণ করলে মৃত্যু নিবন্ধন সনদ
- ওয়ারিশন সনদপত্র
- নাগরিকত্ব সনদপত্র
- পাসপোর্ট এর কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
স্বামী বা স্ত্রী এর নাম সংশোধনের ক্ষেত্রে-
- স্বামী অথবা স্ত্রী এর জাতীয় পরিচয় পত্রে কপি
- নিকাহনামা
- পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স এর কপি (যদি থাকে)
- অন্য কোন গ্রহণযোগ্য কাগজের কপি।
জাতীয় পরিচয় পত্রে নিজ নাম সংশোধনের ক্ষেত্রে-
- এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার সনদের কপি।
- জন্ম নিবন্ধন সনদ
- পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স এর কপি।
- নাগরিকত্ব সনদপত্র
- ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে সম্পাদিত এফিডেভিট
- বিবাহিতদের ক্ষেত্রে স্ত্রী বা স্বামীর জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি
বিবাহ বা বিবাহবিচ্ছেদের কারণে সংশোধনের ক্ষেত্রে-
- বিবাহের কারণে স্বামীর নাম অন্তর্ভূক্ত করতে চাইলে কাবিননামা ও স্বামীর জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি।
- বিবাহ-বিচ্ছেদের কারণে স্বামীর নাম বাদ দিতে চাইলে তালাকনামার সত্যায়িত কপি।
জাতীয় পরিচয় পত্রে জন্ম তারিখ সংশোধনের ক্ষেত্রে-
- আবশ্যিকভাবে এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার সনদপত্রের কপি।
- জন্ম নিবন্ধন সনদ পত্রের কপি।
- পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স এর কপি।
- অস্বাভাবিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সকল সনদের মূলকপিসহ ব্যক্তিগত শুনানীতে হাজির হতে প্রয়োজন হতে পারে।
অনলাইনে নতুন ভোটার হওয়ার আবেদন কিভাবে করবেন জানতে এখানে ক্লিক করুন।
কিভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন এর আবেদন করবেন
অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের জন্য নিম্নের ধাপগুলি অনুসরণ করুন।
প্রথম ধাপ
১. প্রথমে আপনার স্মার্টফোন অথবা কম্পিউটারের যে কোন একটি ব্রাউজার ওপেন করে নিয়ে এর অ্যাড্রেস বারে services.nidw.gov.bd টাইপ করে সেখানে প্রবেশ করুন অথবা এখানে ক্লিক করুন। আপনাকে বাংলাদেশ এনআইডি অ্যাপ্লিকেশন সিস্টেম এর ওয়েবসাইটে নিয়ে যাওয়া হবে।
২. সেখানে নিচের দিকে নিম্নের চিত্রের মতো “লগইন করুন” সেকশন হতে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর অথবা ইউজারনেম, পাসওয়ার্ড এবং ক্যাপচা পূরণ করে “লগইন” অপশন নির্বাচন করুন।

৩. এবারে নিম্নের চিত্রের মতো আপনার তথ্যাদি দেখানো হবে। সেখানে আপনি আপনার বর্তমান জাতীয় পরিচয় পত্র ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। অন্যান্য তথ্যাদি প্রদর্শন বা সংশোধন করার জন্য আপনি “প্রোফাইল” অপশন নির্বাচন করুন।

এবারে আপনাকে প্রোফাইল এর অধীনে তিনটি ক্যাটাগরিতে আপনার সকল তথ্যাদি দেখানো হবে।
সেখানে প্রথমেই দেখাতে পাবেন আপনার ব্যক্তিগত তথ্যাদি। যেমন- নাম, বাংলা ও ইংরেজিতে, লিঙ্গ, রক্তের গ্রুপ, জন্ম নিবন্ধন নম্বর, জন্ম তারিখ, জন্মস্থান, পিতা, মাতা, স্ত্রীর নাম, তাদের জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর ইত্যাদি।
দ্বিতীয় অংশে পাবেন শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্য, পেশা, অসমর্থতা, সনাক্তকরণ চিহ্ন, টিন নম্বর, ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর, ধর্ম, মোবাইল নম্বর ইত্যাদি।
তৃতীয় অংশ “ঠিকানা” অংশে পাবেন, বর্তমান ঠিকানা বা ভোটার ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানার সকল তথ্যাদি।
৪. এখানে আপনি উপরের দিকে “এডিট” অপশন নির্বাচন করলে একটি পপআপ নোটিশ প্রদর্শিত হবে। এখানে থাকা প্রয়োজনীয় তথ্যাদি ভালোভাবে পড়ে বুঝে নিন।

৫. এবারে “বহাল” অপশন নির্বাচন করুন। এবারে আপনাকে আপনার তথ্যাদি সংশোধনের জন্য নিম্নের চিত্রের মতো প্রতিটি তথ্যের পাশে টিক চিহ্ন দেবার মত অপশন দেখতে পাবেন।

এখান থেকে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্যগুলির শুরুতে টিক চিহ্ন দিয়ে নিন এবং তা পরিবর্তন করে নিন।
তিনটি ক্যাটাগরিতে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, অন্যান্য এবং ঠিকানা সেকশন হতে আপনার প্রয়োজনীয় জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন এর তথ্যাদি হালনাগাদ করে নিন।
৬. আপনার কাঙ্খিত তথ্যাদি হালনাগাদ হয়েগেলে নিম্নের চিত্রের মতো “পরবর্তী” অপশন নির্বাচন করে পরের ধাপে প্রবেশ করুন।

দ্বিতীয় ধাপ
২য় ধাপটি হচ্ছে পরিবর্তন। এখানে আপনার পূর্বের তথ্য ও সংশোধনী তথ্যাদি দেখতে পাবেন। আবারও যদি কোন সংশোধনী প্রয়োজন হয়ে থাকে তবে উপরের দিকে “পেছনে” অপশন নির্বাচন করে আবারও তা সংশোধন করে নিতে পারবেন।
৭. সবকিছু ঠিক থাকলে আবারও “পরবর্তী” অপশন নির্বাচন করে পরের ধাপ “ট্রানজেকশন”এ প্রবেশ করুন। সেখানে নিম্নের চিত্রের মতো আপনার প্রোফাইলে থাকা টাকা তথা ডিপোজিট এর পরিমানসহ দুটি প্রয়োজনীয় তথ্যাদি দেখতে পাবেন।

আপনি এখানে “বিতরনের ধরণ” হতে দুটি অপশন দেখতে পাবেন। একটি “রেগুলার” এবং অপরটি “রেগুলার স্মার্ট কার্ড” আপনার কাঙ্খিত অপশনটি নির্বাচন করে নিন।
৮. এবারে উপরের দিকে থাকা “পরবর্তী” অপশন নির্বাচন করলে দেখতে পাবেন আপনার কত টাকা সংশোধনী ফি এর প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ এখানে প্রদর্শিত পরিমান টাকা আপনার প্রোফাইল অ্যাকাউন্টে জমা করতে হবে। এ জন্য যা করতে হবে-
৮.১ যেকোন স্মার্টফোনে ইন্টারনেট কানেকশন দিয়ে নিয়ে বিকাশ অ্যাপে প্রবেশ করে নিন। সেখানে থাকা “পে বিল” অপশন নির্বাচন করুন।

৮.২ এরপর নিচের দিকে দেখতে পাবেন “NID Service” আপনি সেটি নির্বাচন করুন।

৮.৩ এবারে আপনাকে নিম্নের চিত্রের মতো ইন্টারফেস এ নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে আবেদনের ধরণ হতে “Other Info Correction” অপশন নির্বাচন করে দিন।

এর নিচের দিকে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বরটি দিয়ে নিন।
এরপর বিকাশ অ্যাপের “পে বিল করতে এগিয়ে যান” অপশন নির্বাচন করুন।
৮.৪ এবারে আপনাকে সর্বমোট ফি এর পরিমান দেখাবে। সেই সাথে আপনার বিকাশ ব্যালান্সও দেখতে পাবেন। পর্যাপ্ত ব্যালেন্স থাকলে নিচের দিক হতে “পরের ধাপে যেতে ট্যাপ করুন” অপশন নির্বাচন করুন।
৮.৫ এবারে আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টের পিন নম্বর চাইবে। আপনি সেটি দিয়ে নিয়ে স্বাভাবিক অন্যান্য পেমেন্ট মেথডের মত পেমেন্ট দিয়ে নিন।
৯. আবারও ব্রাউজারে গিয়ে তা রিফ্রেশ করে নিন। এতে আপনাকে নিম্নের চিত্রের মতো একটি মেসেজ দেখানো হবে।

এর মানে হচ্ছে আমাদের ইতিপূর্বের কাজগুলি সংরক্ষণ করা আছে। সেই সাথে আপনার প্রোফাইলে জমাকৃত টাকার পরিমানও দেখতে পাবেন। এবারে আপনি “পরবর্তী” অপশন নির্বাচন করে পরের ধাপে প্রবেশ করুন।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করা
১০. এবার নিম্নের চিত্রের মতো আপনার কাঙ্খিত সংশোধনী তথ্যের জন্য ডকুমেন্ট আপলোড করতে হবে। এখানে চিহ্নিত ড্রপডাউন মেনুতে ক্লিক করে আপনার সাপোর্টিং ডকুমেন্ট এর ধরণ নির্বাচন করে নিন।

এরপর ডান দিকে থাকা “আপলোড” অপশনে ক্লিক করে আপনার ডিভাইস হতে উক্ত ডকুমেন্টটি সিলেক্ট করে নিন। এক্ষেত্রে আপনি PDF বা JPEG ফরমেট এর ফাইল আপলোড করতে পারবেন।
একইভাবে আপনার চাহিত ফাইলগুলি একে একে বিবরণসহ আপলোড দিয়ে নিন। প্রয়োজনে অনলাইনে আপনার ডকুমেন্টগুলি রিসাইজ করে নিন।
১১. আপলোড করা শেষ হলে উপরের দিকে থাকা “পরবর্তী” অপশন নির্বাচন করে শেষ ধাপে প্রবেশ করুন।
এই ধাপে আপনার পরিবর্তন করা সকল তথ্যাদি ও সেই সাথে আপলোডকৃত ডকুমেন্টগুলির তথ্যাদি দেখে নিতে পারবেন।
১২. সব কিছু ঠিক থাকলে “সাবমিট” অপশন নির্বাচন করে আবেদনটি দাখিল করুন।
১৩. আবেদনটি দাখিল করার পর ব্রাউজারটি রিলোড বা রিফ্রেশ করলে নিম্নের চিত্রের মতো মেসেজ দেখতে পাবেন। সেখানে থাকা “ডাউনলোড” অপশনে ক্লিক করে আপনার আবেদনটি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

এভাবে আবেদন করার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আপনার আবেদনটি যাচাই-বাছাই করে দেখার পর অনুমোদন দেবে। তখন আপনি আপনার মোবাইলে একটি মেসেজ পাবেন। তারপর এই ওয়েবসাইটে লগইন করে আপনার আপডেট জাতীয় পরিচয় পত্র ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।
আশা করছি পুরো প্রক্রিয়াটি আপনি বুঝতে পেরেছেন। যদি কোন অংশ বুঝতে সমস্যা হয়ে থাকে তবে কমেন্টে আমাদের জানাতে পারেন।