ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী যে নামগুলো রাখা হারাম

হারাম নাম: মুসলিম সন্তানের জন্য যে নাম রাখা হারাম

মুসলিম পরিবারে একজন সন্তান জন্ম গ্রহণের পর তার অভিভাবকদের অন্যতম একটি প্রধান কাজ হচ্ছে উক্ত সন্তানের জন্য একটি ভালো নাম রাখা। আমরা অনেক সময় নামের সঠিক অর্থ না জেনেই যেমন-তেমন কিছু হারাম নাম দিয়ে রাখি। যার অর্থ ভিন্ন বা যে নামগুলো আমাদের সন্তানের জন্য রাখা একেবারে অনুচিত। একজন মুমিন মুসলিম হিসেবে আমাদের সন্তানের জন্য যে হারাম নাম রাখা হারাম সে বিষয়ে আমরা এখানে বিস্তারিত জানতে চেষ্টা করবো।

ইসলামে সন্তানের সুন্দর নাম রাখার গুরুত্ব

সন্তানের জন্য একটি সুন্দর নাম রাখা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধানগুলোর মধ্যে একটি। একজন মুসলিমের জন্য তার নামের মধ্যে আল্লাহতাআলার নামের মধ্যে বিশেষ সম্মান প্রকাশ করা একটি ইসলামি ঐতিহ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ। অপরদিকে ইসলামিক শারিয়াহ অনুযায়ী মুসলিম সন্তানের জন্য কিছু কিছু নাম রাখা নিষিদ্ধ বা হারাম হতে পারে মর্মে ইসলামী বিদ্যানগণ তাদের মত দিয়েছেন। তাদের মতে যদি উক্ত নাম আল্লাহর প্রতি অবমাননা সৃষ্টি করে বা সেই নামে ভুলভাবে আল্লাহর নামের সাথে এমন কোনো শব্দ যুক্ত করা হয় যা সন্তানের সাথে আল্লাহর নামের অর্থ বিকৃত হয়ে যায়। বিষয়টি শুধু আল্লাহর নামের ক্ষেত্রে নয় বরং এমন নামের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য যা কোনো মিথ্যাচারী, ধোকাবাজ বা ইতিহাসের কোনো মন্দ ব্যক্তি সত্তার পরিচায়ক।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন মানুষকে তাদের নিজের নাম এবং তাদের পিতার নাম নিয়ে ডাকা হবে। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত তার নিজের জন্য এবং তার সন্তানের জন্য হারাম নাম না রেখে সুন্দর কোনো নাম রাখা (সূত্র: আবু দাউদ ৪৯৪৮)। এ হাদিস থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়, নাম কেবল একটি পরিচয় নয় বরং এটি আখিরাতেও আমাদের পরিচিতি বহন করবে।

রাসুল (সা.) কখনোই একজন মুসলিম সন্তানের জন্য এমন কোনো নাম পছন্দ করতেন না যার অর্থ মন্দ তথা নেতিবাচক বা নিন্দনীয়। হযরত ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে, হযরত ওমর (রা.)-এর এক মেয়ের নাম ছিল ‘আছিয়া’ যার অর্থ অবাধ্য। রাসুল (সা.) তার নাম পরিবর্তন করে ‘জামিলা’ (অর্থাৎ সুন্দর) রেখেছিলেন (সূত্র: মুসলিম ২১৩৯)।

ইসলামে যে নামগুলো রাখা হারাম
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

অপর একটি হাদিসে উল্লেখ রয়েছে হযরত সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিবের দাদার নাম ছিল ‘হাযান’ (অর্থ- শক্ত জমিন)। নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এই নাম পরিবর্তন করে ‘সাহল’ (অর্থ- নরম জমিন) রাখতে উপদেশ দিয়েছিলেন।

হারাম নাম যা রাখা যাবে না

যে সকল হারাম নাম বা যে নামগুলো রাখা একজন মুসলিম সন্তানের জন্য হারাম সে সম্পর্কে নিম্নে বর্ণনা করা হলো।

আল্লাহর নামের সাথে গোলাম বা আব্দ সংযুক্ত নাম রাখা

যেকোনো নামের সাথে গোলাম বা আব্দ (বান্দা) শব্দ যুক্ত করে রাখা নামগুলো হারাম নাম। যেমন: যেমন- আব্দুল কামার (চন্দ্রের বান্দা বা উপাসক), আব্দুল শামস (সূর্যের উপাসক), আব্দুল মোত্তালিব (মোত্তালিবের বান্দা বা দাস), আব্দুল কালাম (কথার দাস), আব্দুল কাবা (কাবাগৃহের দাস), আব্দুন নবী (নবীর দাস), গোলাম রসুল (রসূলের দাস), গোলাম নবী (নবীর দাস), আব্দুল আলী (আলীর দাস), আব্দুল হুসাইন (হোসাইনের দাস), আব্দুল আমীর (গর্ভনরের দাস), গোলাম মুহাম্মদ (মুহাম্মদের দাস), গোলাম আবদুল কাদের (আবদুল কাদেরের দাস) গোলাম মহিউদ্দীন (মহিউদ্দীন এর দাস) ইত্যাদি।

এই হারাম নামগুলির মধ্যে এমন কিছু শব্দ রয়েছে যা আল্লাহর দাসত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় বরং অন্য কোনো সত্ত্বার সঙ্গে সম্পর্কিত। এমন নাম রাখা ইসলামি মূল্যবোধের বিরোধী। আমাদের দেশে সাধারণত কারও নামের মধ্যে ‘আব্দ’ শব্দটি থাকলেও, তাকে ডাকার সময় উক্ত ‘আব্দ’ শব্দটি বাদ দিয়ে শুধুমাত্র বাকি অংশের নাম ধরে ডাকা হয়ে থাকে, যেমন আব্দুর রহমানকে ডাকা হয়ে থাকে ‘রহমান’ বলে। যা শুদ্ধ নয় এবং এমনভাবে নাম ধরে ডাকা ইসলামি দৃষ্টিতে একেবারে অনুচিত।

আল্লাহর নাম নয় অথচ এমন মনে করে রাখা হারাম নাম

আমাদের সন্তানদের এমন কিছু নাম আমরা দিয়ে থাকি যেগুলিকে আমরা কেউ কেউ আল্লাহতাআলার নাম মনে করে ভুল করে থাকি। অথচ সেগুলি আল্লাহর নাম নয়। যেমন ‘আব্দুল মাবুদ’ বা ‘আব্দুল মাওজুদ’। এগুলি কুরআন বা হাদীসের মধ্যে আল্লাহর নাম হিসেবে পাওয়া যায় না। তাই এই ধরণের শব্দগুলোর সাথে আব্দ শব্দ যুক্ত করে কারও নাম রাখা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

ধর্মপ্রান মুসলিমের জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইসলামিক স্ট্যাটাসগুলি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

অসত্য বা অপ্রাসঙ্গিক নাম রাখা

একজন মুসলিম সন্তানের এমন নাম হওয়া উচিত যা এর সঠিক অর্থ বহন করবে এবং এটির সত্যিকার কোনো ভাল অর্থ থাকবে। যেমন ‘শাহেনশাহ’ বা ‘মালিকুল মুলক’ (রাজাধিরাজ) নাম রাখা বা ‘সাইয়্যেদুন নাস’ (মানবজাতির নেতা) নাম রাখা হারাম। এই ধরনের নামগুলো অহংকার ও মিথ্যাচার প্রদর্শন করে থাকে। যা ইসলামে মোটেও পছন্দনীয় নয়।

আল্লাহ তাআলার জন্য বিশেষভাবে নির্ধারিত নামের ব্যবহার

যে সকল নাম আল্লাহ তাআলার জন্য বিশেষভাবে নির্ধারিত যেমন- আল্লাহ, আর-রহমান, আল-হাকাম, আল-খালেক, এই ধরনের নাম মুসলিম সন্তান তথা মাখলুকের জন্য ব্যবহার করা একেবারে নিষিদ্ধ। তবে আল্লাহর নামের মধ্যে এমন কিছু কিছু নাম রয়েছে যা কুরআন ও হাদীসে আল্লাহর নাম হিসেবেও এসেছে এবং মাখলুকের জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন “আল-আজিজ” (অত্যন্ত শক্তিশালী)।

সুতরাং একজন মুসলিম সন্তানের নাম হিসেবে উপরে বর্ণিত নিষিদ্ধ নাম ইতিপূর্বে দেয়া হয়ে থাকে তবে সেই নাম পরিবর্তন করে যে কোনো ভাল ইসলামী নাম রাখতে হবে। নামটি যেন আল্লাহর প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করে সে বিষয়ে বিশেষ খেয়াল রাখা উচিত। আপনার সন্তানের ইহকাল ও পরকালে কল্যাণ কামনার্থে কোনো নাম ভুলভাবে রাখা হলে তা সংশোধন করা একান্ত প্রয়োজন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top