অনলাইনে জমির খাজনা দেবার নিয়ম চালু হওয়াতে আপনি এখন সহজে ঘরে বসে আপনার জমির খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করতে পারবেন। যা নিঃসন্দেহে জন দূর্ভোগ কমাতে একটি ভাল উদ্যোগ। কিভাবে আপনি নিজে অনলাইনে আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোন বা কম্পিউটারে ইন্টারনেটের সাহায্যে জমির খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করবেন সে বিষয়ে আমরা জানতে চেষ্টা করব।
Table of Contents
জমির খাজনা দেবার জন্য কি কি তথ্য প্রয়োজন
অনলাইনে জমির খাজনা পরিশোধ করার জন্য আপনার যে সকল প্রয়োজনীয় তথ্যাদি বা ডকুমেন্টস লাগবে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
- ইন্টারনেট সংযোগসহ একটি স্মার্টফোন অথবা কম্পিউটার।
- আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র।
- জমির খতিয়ান এর স্ক্যান করা কপি।
- জমির অবস্থান তথা মৌজার তথ্য।
- অনলাইন পেমেন্ট মাধ্যম তথা বিকাশ, উপায়, রকেট ইত্যাদি।
- উত্তরাধিকার সূত্রে জমির মালিক হয়ে থাকলে উত্তরাধিকার সনদ।
কিভাবে অনলাইনে জমির খাজনা দেবেন?
অনলাইনে জমির খাজনা দেবার জন্য আমাদের কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। নিম্নে সে সকল ধাপ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ওয়েব সাইটে প্রবেশ
এজন্য প্রথমে আপনাকে কম্পিউটারে অথবা আপনার স্মার্টফোনে যে কোন একটি ওয়েব ব্রাউজার ওপেন করে নিতে হবে। সেখানে url বার এ ldtax.gov.bd টাইপ করে ওয়েব সাইটটিতে প্রবেশ করুন অথবা এখানে ক্লিক করুন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে নিম্নের চিত্রের মতো “অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর” নামক অপশনটি নির্বাচন করুন।

এবারে আপনাকে নিম্নের চিত্রের মতো ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থাপনা সিস্টেম এর ইন্টারফেস এ নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে মূল তিনটি অপশন দেখতে পাবেন। একটি হচ্ছে নাগরিক নিবন্ধন, দ্বিতীয়টি নাগরিক লগইন এবং তৃতীয়টি সংস্থা লগইন।

আপনি যদি ইতিপূর্বে এই সিস্টেমে নিবন্ধন করে থাকেন তবে দ্বিতীয় অপশনটি নির্বাচন করে লগইন করে নিতে পারেন।
কিভাবে নাগরিক নিবন্ধন করবেন?
আমরা নাগরিক নিবন্ধন করে নেব। এজন্য মোবাইল নম্বর এর ঘরে আপনার মোবাইল নম্বরটি দিয়ে নিন। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন যার নামে জমি তার মোবাইল নম্বর এবং জাতীয় পরিচয় পত্র এখানে ব্যবহার করবেন অথবা শুধমাত্র তার বৈধ ওয়ারিশ কেবল নাগরিক নিবন্ধন করে নিতে পারবেন। অন্য কেউ নয়।
এবারে নিচের দিকে ছোট একটি অংক দেখতে পাবেন, সেটির উত্তর লিখে নিন। তারপর “পরবর্তী পদক্ষেপ” অপশন নির্বাচন করুন। কিছুটা সময় নিয়ে আপনার প্রদানকৃত তথ্য যাচাই করা হবে। এরপর আপনাকে নিম্নের চিত্রের মতো ওটিপি ভেরিফিকেশন করার জন্য বলা হবে। আপনার প্রদানকৃত মোবাইলে প্রাপ্ত ওটিপি বসিয়ে “যাচাই করুন” নামক অপশন নির্বাচন করুন।

সবকিছু ঠিক থাকলে এবারে আপনাকে নিম্নের চিত্রের মতো ইন্টারফেস এ নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে “নতুন পাসওয়ার্ড” এর ঘরে আপনি পাসওয়ার্ড লিখে নিন। একই পাসওয়ার্ড নিচের দিকে “পাসওয়ার্ড নিশ্চিত করুন” এর ঘরে বসিয়ে নিন। তারপর নিচের দিকে আবারও অংকটির উত্তর বসিয়ে “সংরক্ষণ করুন” অপশন নির্বাচন করুন।

কিভাবে এনআইডি ভেরিফাই করবেন?
এবারে আপনাকে ওয়েব সাইটের ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থাপনা সিস্টেম এর ইন্টারফেস এ নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে থাকা “নাগরিক লগইন” অপশন নির্বাচন করে মোবাইল নম্বর, পাসওয়ার্ড বসিয়ে নিন। আবারও এখানে দেখানো অংকটির উত্তর দিয়ে নিয়ে “লগইন করুন” অপশন নির্বাচন করুন।
লগইন করার পর আপনাকে নতুন একটি পেজ এ নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে প্রথমে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি ভেরিফাই করে নিতে হবে। সে জন্য নিম্নের চিত্রের মতো সেখানে থাকা “এনআইডি ভেরিফাই করুন” নামক অপশনটি নির্বাচন করুন।

এবারে আপনাকে জাতীয় পরিচয় পত্র ভেরিফিকেশন করার জন্য নিম্নের চিত্রের মতো তথ্য প্রদানের ফরম দেখানো হবে। সেখানে জমির মূল মালিক অথবা তিনি যদি মারা গিয়ে থাকেন তবে তার বৈধ ওয়ারিশ এর এনআইডি এর তথ্যাদি যুক্ত করে নিচের দিকে জন্ম তারিখ দিয়ে নিয়ে “যাচাই ও হালনাগাদ করুন” অপশন নির্বাচন করুন।

সব কিছু ঠিক থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে আপনার এনআইডি ভেরিফাই হয়ে যাবে।

কিভাবে খতিয়ান যুক্ত করবেন?
এরপর আপনি নিম্নের চিত্রের মতো বাম দিকে দেখতে পাবেন নতুন কয়েকটি অপশন যুক্ত হয়েছে। এ অপশনগুলোর মধ্যে “খতিয়ান” অপশনটি নির্বাচন করুন। আপনাকে নিম্নের চিত্রের মতো একটি ইন্টারফেস দেখানো হবে।

এখানে একে একে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্যাদি যুক্ত করুন। প্রথমে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, মৌজার ধরণ, খতিয়ান নম্বর, ইত্যাদি দিয়ে নিয়ে “Choose File” নামক অপশনে ক্লিক করে খতিয়ানটির স্ক্যান করা কপি নির্বাচন করে নিন। এরপর মালিকের ধরণ নির্বাচন করে নিন। যদি “উত্তরাধিকার” অপশন নির্বাচন করেন তবে নিচের দিকে নিম্নের চিত্রের মতো অতিরিক্ত তথ্য যুক্ত করার অপশনসমূহ দেখতে পাবেন।

সেখানে খতিয়ানের মালিকের নাম, পিতা অথবা স্বামীর নাম, ঠিকানা ইত্যাদি দেবার পর দেখতে পাবেন উত্তরাধিকার সনদ যুক্ত করার অপশন। সেখানে উত্তরাধিকার সনদের স্ক্যান করা কপি “Choose File” অপশনের মাধ্যমে যুক্ত করে নিন। এবারে সম্পর্ক নির্বাচন করুন।
এখানে যদি একাধিক উত্তরাধিকারী থাকে তবে সবুজ রং এর যোগ চিহ্নতে ক্লিক করলে আবারও পূর্ণ তথ্য যুক্ত করার ফরম পাবেন অথবা কোন তথ্য ভুল এন্ট্রি হয়ে গেলে লাল রং এর বিয়োগ চিহ্নতে ক্লিক করে তা বাতিল করে নিতে পারবেন।
এভাবে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি দিয়ে যথাযথভাবে খতিয়ান তালিকাভূক্ত করলে নিচের দিকে খতিয়ান তালিকা হতে তা দেখে নিতে পারবেন। খতিয়ান অন্তর্ভূক্ত করা হলে “সংরক্ষণ করুন” অপশন নির্বাচন করে নিন।
আপনার সাবমিট করা তথ্যাদি যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত কাজে তিন থেকে চারদিন সময় লাগতে পারে। আপনি তিন থেকে চারদিন পর আবারও এই ওয়েব সাইটে প্রবেশ করে বামদিক হতে “হোল্ডিং” নামক অপশন নির্বাচন করুন। এবারে আপনাকে নিম্নের চিত্রের মতো স্ট্যাটাস দেখতে পাবেন সেটি অনুমোদিত কিনা।

জমির দলিল বৈধ কিনা? যাচাই করার উপায় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন।
কিভাবে ভূমি উন্নয়ন কর পেমেন্ট করবেন?
অনুমোদিত হয়ে থাকলে এর ডানদিকে পদক্ষেপ এর নিচের দিকে থাকা “বিস্তারিত” অপশন নির্বাচন করুন। এবারে আপনাকে নিম্নের চিত্রের মতো ইন্টারফেস এ নিয়ে যাওয়া হবে।

এখানে আপনার প্রদানকৃত খতিয়ানভূক্ত জমির মোট কত টাকা খাজনা বাকি রয়েছে, কত বছরের দেয়া আছে, জমির ধরণ ইত্যাদি বিস্তারিত তথ্যাদি দেখে নিতে পারবেন। অনলাইনে খাজনা দেবার জন্য এখানে থাকা “অনলাইন পেমেন্ট” অপশনটি নির্বাচন করুন। এবারে আপনার সামনে পেমেন্ট অপশনসমূহ দেখানো হবে। সেখানে থাকান বিকাশ বা উপায় বা এ ধরণের অপশন হতে আপনার পছন্দের অপশনটি নির্বাচন করে নিয়ে নিচের দিকে থাকা “ই-পেমেন্ট করুন” নামক অপশনটি নির্বাচন করে নিন।
বিকাশ পেমেন্ট ইন্টারফেস প্রদর্শন করা হবে। সেখানে আপনার সর্বমোট খাজনার পরিমান দেখতে পাবেন। এখানে যে অ্যাকাউন্টে উক্ত পরিমান ব্যালেন্স রয়েছে এমন কোন বিকাশ অ্যাকাউন্টর সম্বলিত মোবাইল নম্বর দিয়ে নিন। এরপর “CONFIRM” অপশন নির্বাচন করুন।
আপনার প্রদানকৃত নম্বরে একটি ওটিপি পাঠানো হবে। তা বসিয়ে নিন, তারপর আপনার পাসওয়ার্ড বসিয়ে নিয়ে কনফার্ম করুন। ব্যাস আপনার অনলাইনে জমির খাজনা দেবার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে যাবে।
কিভাবে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের রশিদ নেবেন?
এবারে আপনি আবারও মেইন মেনু হতে “দাখিলা” অপশন নির্বাচন করুন। দাখিলা অপশন নির্বাচন করলে আপনার সামনে নিম্নের চিত্রের মতো একটি ইন্টারফেস দেখানো হবে।

সেখানে ইতিপূর্বের আপনার প্রদানকৃত জমির খাজনার তথ্যাদি দেখতে পাবেন। সেখানে ডান দিকে সংরক্ষণ এর নিচের দিকে থাকা “বিস্তারিত” অপশন নির্বাচন করুন।
এবারে আপনাকে নিম্নের চিত্রের মতো ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ রসিদ দেখানো হবে।

নিচের দিকে থাকা “প্রিন্ট” অপশনে ক্লিক করে আপনি তা প্রিন্ট করে নিতে পারবেন।
আশা করছি আপনি সফলভাবে অনলাইনে জমির খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর কিভাবে দিতে হয় তা জানতে পেরেছেন। যদি এ বিষয়ে কোন কিছু জানতে চান তবে নিম্নে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের তা জানাতে পারেন।